নগরীর আকবরশাহ থানাধীন হারবাতলী থেকে উজানের দিকে বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী কালীর ছড়া খালের শাখা–প্রশাখাসহ আরো প্রায় চার কিলোমিটার অংশ অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এ সময় প্রায় ৪০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৮টি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও আটটি পানির সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়। গতকাল সকালে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এর আগে গত পরশু একই এলাকায় অভিযান চালিয়ে হারবাতলী থেকে উজানের দিকে কালীর ছড়া খালের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ দখলমুক্ত করা হয় এবং প্রায় ৩০ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
সবমিলে গত দুই দিনের অভিযানে হারবাতলী থেকে উজানের দিকে বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী কালীর ছড়া খালের শাখা–প্রশাখাসহ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে এবং ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৭০ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ডেইরি ফার্ম, গুদামঘর, আবাসিক প্লটের সীমানা দেওয়াল, বসতঘর, শৌচাগার ও দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের সেমিপাকা ও পাকা স্থাপনা।
গতকাল ও আগের দিনের অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড আরাফাত সিদ্দিকী। সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিন হোসেন একটি টিমকে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া অভিযানের সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদিদ। সহযোগিতায় ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, পিডিবি, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, বাপা, বেলাসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। গত ১৭ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯ তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক সভায় আকবরশাহ থানাধীন লেক সিটি ও সুপারি বাগান এলাকায় অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এসব এলাকায় হারবাতলী থেকে উজানের দিকে বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী কালীর ছড়া খালের শাখা–প্রশাখাসমূহের অবস্থান। অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক ওই সভায় বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড আরাফাত সিদ্দিকী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯ তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল ও আগের দিন মিলে আকবরশাহ থানার লেক সিটি ও সুপারি বাগান এলাকা তথা হারবাতলী থেকে উজানের দিকে বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী কালীর ছড়া খালের শাখা–প্রশাখাসহ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এ সময় ছোট বড় প্রায় ৭০ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৮ টি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও আটটি পানির সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত দুই দিনের অভিযানে অবৈধ দখলদারদের টনক নড়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, এভাবে অবৈধভাবে দখলদারিত্ব ধরে রাখা যাবে না। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আমাদের স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে, পাহাড়, খাল এসব থেকে আপনারা সরে পড়ুন।
উল্লেখ্য, গত পরশুর অভিযানের একপর্যায়ে হারবাতলী এলাকায় অভিযান পরিচালনাকারী টিমকে পাহাড় কেটে সুবিধাভোগকারীদের একটি দল বাধা দেয়। তারা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্থানীয় এক পরিবেশকর্মীর ওপর চড়াও হন। শফিকুল ইসলাম নামের ওই পরিবেশকর্মীকে মারধরও করা হয়। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির সাথে কাজ করেন।