দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির এই সময়ে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপণ্য সামগ্রী আগের মতো সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন না। এখন শুধুমাত্র ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকাভুক্ত কার্ডধারীরাই পাচ্ছেন টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য সামগ্রী। এর ফলে অসংখ্য সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। টিসিবির পণ্য বিক্রিকালে প্রতিটি ট্রাকে এখন দুটি চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমত, যারা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক কার্ডধারী। তারা প্রচণ্ড রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন। দ্বিতীয়ত, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ যাদের কোনো কার্ড নাই। তারা পণ্যের আশায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালি হাতে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কার্ড তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউপি চেয়ারম্যান- মেম্বাররা তাদের অনুসারী ও পছন্দের লোকদের কার্ড দিয়েছেন। এছাড়া টিসিবি এতদিন যে পণ্য বিক্রি করেছে, সেখানে সবার জন্য লাইনে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল। এখন রাজধানী ছাড়া অন্য জেলায় শুধু কার্ডধারীদের পণ্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাকিদের সুযোগ থাকল না।
হাফেজা আক্তার নামের একজন বলেন, প্রচণ্ড রোদে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য পাইনি। আমাদের কার্ড নেই তাই পণ্য দেয়নি। কাজীর দেউড়ি এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে দাঁড়ানো রিকশা চালক আবদুস শুক্কুর বলেন, আমরা আগে রিকশা দাঁড় করিয়ে এখানে লাইনে দাঁড়ালে কম দামে তেল, ডাল, চিনি পেতাম। এখন আমাদের নাকি কার্ড নেই, তাই দিল না। ওয়ার্ড কাউন্সিলর তো আমাদের চিনে না। গেলেও কার্ড দেবে না। এই ব্যাপারে টিসিবি চট্টগ্রামের ডিলার সমিতির সভাপতি মো. কামরুল ইসলাম রাশেদ আজাদীকে জানান, এখন আগের মতো সর্বস্তরের মানুষ টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন না। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা যাদেরকে কার্ড দিয়েছেন শুধুমাত্র তারাই ডিলারের কাছে কার্ড দেখিয়ে পণ্য নিতে পারছেন। এতে করে সাধারণ মানুষেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রতিদিন ৫শ জন কার্ডধারীর মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি করছি। একজন ক্রেতা ৫৫ টাকায় ১ কেজি চিনি, ৬৫ টাকায় ২ কেজি মসুর ডাল, প্রতি লিটার ১১০ টাকা দামে একজন ক্রেতা ২ লিটার সয়াবিন তেল ও ২০ টাকা দামে ২ থেকে ৩ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। তিনি বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের লিটার যখন সরকার নির্ধারিত ১৭৮ টাকা, তখন টিসিবি একই তেল বিক্রি করছে ১১০ টাকায়। একইভাবে বড় ছাড় পাওয়া যাচ্ছে চিনি, ডাল এবং পেয়াজের ক্ষেত্রেও। সব মিলিয়ে এক দফা পণ্য নিতে পারলে মানুষের সাশ্রয় হয় অন্তত ২৩০ টাকা।
অবশ্য লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই গতকাল বলেছেন, কার্ড পেয়েও পণ্য নিতে চার-পাঁচ ঘণ্টা লেগে যাওয়ায় তাদের কর্মসময় নষ্ট হয়। দেখা যাচ্ছে, সেখানে কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে দিনের পুরো আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
টিসিবি অফিস থেকে জানানো হয়েছে, দেশে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকার টিসিবির মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। প্রতিদিন একজন ডিলারকে ৫০০ কেজি চিনি, ১ টন ডাল, ১ হাজার লিটার তেল ও ৫০০ থেকে ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রম আগামী ৩১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।