কাপ্তাই হ্রদ জীবিকার বিকল্প পথ সৃষ্টি করেছে : পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টা

রাবিপ্রবিতে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এন্ড বায়োসায়েন্স কার্নিভালের উদ্বোধন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৭ মে, ২০২৫ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কাপ্তাই হ্রদ জীবিকার বিকল্প পথ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সমপ্রসারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে যাতে এটি এখানকার জাতিধর্ম নির্বিশেষে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ও উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করবে। এখানকার কাপ্তাই হ্রদ জীবিকার বিকল্প পথ সৃষ্টি করেছে। মৎস্য চাষের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি এটি দুর্গম এলাকা থেকে ফলদ এবং বনজ পণ্য পরিবহনে সুযোগ তৈরি করেছে। মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে বলে জানান এ উপদেষ্টা। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) ও বাংলাদেশ বায়োসেইফটি ও বায়োসিকিউরিটি সোসাইটির (বিবিবিএস) যৌথ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এন্ড বায়োসায়েন্স কার্নিভালের (আইসিবিসি) উদ্বোধন হয়েছে। এতে উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় রাঙামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাবিপ্রবির উপাচার্য ও আইসিবিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত বায়োসায়েন্স কনফারেন্স ও কার্নিভাল আয়োজন করতে পেরে শুধুমাত্র রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ই গর্বিত নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সবাই গর্বিত। এ ধরনের কনফারেন্স বিশ্ববিদ্যালয়কে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অপূরণীয় চাহিদা এবং বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আমরা পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস গড়তে ও সময় ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বে সংকীর্ণতা না থাকুক এবং এ এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখুক।

এরপর প্লেনারী সেশনে বিষয়ভিত্তিক প্রথম বক্তা হিসেবে আইসিডিডিআরবি বায়োসেফটি এর প্রধান ও বাংলাদেশ বায়োসেফটি এন্ড বায়োসিকিউরিটি সোসাইটির সভাপতি ড. আসাদুল গণি বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, টেকসই স্বাস্থ্যসেবা একটি বহুবিষয়ক পদ্ধতি শুধুমাত্র মেডিকেল সায়েন্স, মাইক্রোবায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স, স্ট্যাটিসটিকসসহ এধরনের সব ডিসিপ্লিন একসাথে জড়ো করে মানুষ এবং প্রাণীকূলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হয়। ২০২৫ সালে উন্নত বিশ্বে বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে ল্যাব অটোমেশন চালু করছেযেখানে বায়োসেফটি লেভেল ফোর নিশ্চিত করতে ল্যাব রোবট দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরা আহসান বক্তব্যে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ঔষধ আবিষ্কারে সঠিক উৎস নির্বাচনে নির্ভুলতা ও কার্যকারিতা নির্ধারণে কাজ করে। এআই অল্প সময়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান এবং ডাটাবেইজকে একত্রিত করে নতুন ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করে। এরপর গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেধার অভাব নেই। পর্যাপ্ত গবেষণাগার এবং গবেষণা উপকরণের অভাব রয়েছে তাই বিজ্ঞানের চর্চায় যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার একটা সর্ম্পক গড়ে তুলতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন নতুন উদ্ভাবন এবং আমাদের উদ্ভাবন করার জন্য আছে নতুন প্রজন্ম। এদের একটা সেতু বন্ধন যদি আমরা গড়তে পারি তাহলে আমরা এগিয়ে যাবো।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট জীন বিজ্ঞানী ও বহুব্রীহি ধানের আবিষ্কারক ড. আবেদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের খাদ্য সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এ অঞ্চলে সারাবছর খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং একই ধান গাছ থেকে পাঁচবার ফসল আহরণ নিশ্চিত করতে পঞ্চব্রীহি ধান চাষের সম্ভাবনার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে আগর গাছ রোপণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব। এ মুহূর্তে এ অঞ্চলটি মিথেন নির্গমনের হার প্রায় শূন্যযা এ অঞ্চলের গর্বের বিষয়।

গেস্ট অব অনার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাইদুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বক্তব্য প্রদান করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বায়োসেইফটি ও বায়োসিকিউরিটি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. রাকিবুল ইসলাম এবং ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী অধ্যাপক ও আইসিবিসির সেক্রেটারি ড. নিখিল চাকমা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে টেকনিক্যাল সেশনে চেয়ার ও কোচেয়ার হিসেবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মজিদ এবং মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য প্রফেসর ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। এসেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকগণ ছয়টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ার পোমরা তাহেরিয়া মাদ্রাসায় সালানা জলসা
পরবর্তী নিবন্ধযুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মী অবহিতকরণ সভা