কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু ঘাটে ফিরেছে প্রাণ

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | সোমবার , ৪ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে রোববার (৩ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে মাছ শিকার শুরু হয়েছে। টানা তিন মাস ২ দিন বন্ধ থাকার পর মাছ আহরণের প্রথম দিনেই কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থান থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে করে বিএফডিসির মৎস্য অবতরণ ঘাটে মাছ নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে করে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিএফডিসির রাঙামাটির প্রধান বিপণনকেন্দ্রসহ কাপ্তাই, মারিশ্যা ও মহালছড়ি উপকেন্দ্র।

গতকাল রোববার ভোর ৬টা থেকে কাপ্তাই হ্রদে মধ্যরাত থেকে আহরণ করা মাছ ছোটছোট ইঞ্জিনচালিত বোটে করে জেলেরা নিয়ে আসেন বিএফডিসির মৎস্য অবতরণ ঘাটে। একদিন আগেও নীরব ঘাটটি আজ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের কর্মব্যস্ততায়। শ্রমিকব্যবসায়ীর হাঁকডাকে চিরচেনা রূপে ফিরেছে ঘাটটি। শুধু অবতরণ ঘাটই নয়, ফিশারি ঘাটের চার দিকেই চলছে শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ। তিন মাস পর বরফকলের শ্রমিকরাও ব্যস্ত, একের পর এর বরফ ভাঙছে। অবতরণ ঘাটে মাছের সরকারি রাজস্ব মিটিয়ে ড্রামে বরফসহ প্যাকিং শেষে ট্রাকে তুলে দেয়া হয়। যা চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এদিকে, প্রথম দিনে ধরা পড়া মাছ নিয়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। তবে মাছের আকার প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা ছোট হওয়ায় হতাশ অনেক ব্যবসায়ী। চলতি আহরণ মৌসুমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রত্যাশার কথা জানালেন কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৎস্য আহরণের প্রথম দিনে খুশি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তবে প্রথম দিনে হ্রদে পানি বেশি থাকায় মাছ কম ধরা পড়ছে। প্রথম দিনেই কাঁচকি ও চাপিলা মাছে আধিক্য ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে আকারে ছিল ছোট। আরও কিছুদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকলে মাছ বৃদ্ধির জন্য ভালো হতো। সারা বছর মৎস্য আহরণ হলে ব্যবসায়ীসহ এ খাতের সঙ্গে জড়িত সকলেই লাভবান হবেন বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজ বলেন, ৯৪ দিন প্রতীক্ষার পর কাপ্তাই হ্রদ খুলেছে। কিন্তু যে মাছগুলো আহরণ হচ্ছে, সেগুলোর আকার খুব ছোট। ছোট আমারের মাছ বাজারজাত করা অনেক কষ্টকর। আরও কিছু দিন পর যদি মাছ আহরণ শুরু হতো সেটি মাছগুলো আরও বাড়ার সুযোগ পেতো। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পরিচালিত কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় মূলত হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনার সুষম বৃদ্ধির লক্ষ্যে। টানা তিন মাসের বেশি হ্রদে আহরণ বন্ধ থাকার পর আজ (রোববার) ভোর থেকে জেলেরা মাছ শিকার করে বিএফডিসির অবতরণ ঘাটে আনছেন। সেগুলো শুল্কহার আদায় শেষে বাজারজাত করছে ব্যবসায়ীরা। গত বছর আমরা ৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা এবার কাপ্তাই হ্রদের মাছের অবতরণ আরও বাড়বে।

প্রসঙ্গত, ৭২৫ বর্গ কিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের পোনার প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত, অবমুক্ত করা পোনার সুষম বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় স্থানীয় প্রশাসন। চলতি মৌসুমে তিন মাসের নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞা শেষেও বিএফডিসি প্রস্তুতির জন্য আরও ২ দিন বাড়িয়ে ২ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বর্ধিত করা হয়। ফলে ৩ আগস্ট থেকে হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হয়।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগের হিসাবে, রাঙামাটির রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলা ব্যতিত বাকি আট উপজেলা এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও মহালছড়ি উপজেলাসহ দুই জেলার ১০ উপজেলার প্রায় ২৭ হাজার জেলে পরিবার কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারাগারে মারা গেলেন উখিয়ার ‘ফোর মার্ডার’ মামলার আসামি
পরবর্তী নিবন্ধ২৬ দিন পর কর্ণফুলীতে ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার