দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের পানির চাপ কমাতে খুলে দেয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধ। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে বাঁধের সবকটি স্পিলওয়ে খুলে দেওয়া হয় বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মাহমুদ হাসান। এদিকে কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোত সৃষ্টির শঙ্কায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। সব ধরনের জাহাজ ও নৌযানকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, কাপ্তাই হ্রদে পানির চাপ বাড়ায় বাঁধের ১৬টি স্পিলওয়ে ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রতি সেকেন্ডে স্পিলওয়ে দিয়ে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। বর্তমানে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিট দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে প্রায় ৩২ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও স্পিলওয়ে দিয়ে মোট ৪১ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে কর্ণফুলীতে। কর্ণফুলী অববাহিকায় হ্রদের পানির শেষ গন্তব্য বঙ্গোপসাগর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভাটার সময় স্রোতজনিত কারণে নোঙররত জাহাজ ও জলযানগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই তাদেরকে নিরাপদ অবস্থান গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, জাহাজের ইঞ্জিন দ্রুত চালু করার জন্য প্রস্তুত রাখা, পর্যাপ্ত সংখ্যক নাবিক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের জন্য উপস্থিত থাকা, মুরিং রশি দ্বিগুণ করে বাঁধা এবং শৃঙ্খলিতভাবে নোঙর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে ভিএইচএফ রেডিওযোগে বন্দরে অবহিত করতে হবে।
কর্ণফুলী নদীতে অবস্থানকারী একাধিক লাইটারেজ জাহাজের মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। উজান থেকে প্রচুর পানি নামছে। জাহাজগুলো ড্র্যাগিং করছে জানিয়ে তারা বলেন, ইঞ্জিন সার্বক্ষণিক চালু রেখে জাহাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হচ্ছে।
এর আগে ফিশিং ভ্যাসেলের একজন নাবিক জানান, এই ধরনের পরিস্থিতি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রচুর স্রোত। উপর থেকে প্রচুর পানি নামছে। এগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত পানি। এখন নতুন করে জলকপাট খুলে দিলে প্রতি সেকেন্ডে আরো ৯ হাজার কিউসেক পানি নামবে। তখন পরিস্থিতি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানির এমন তোড়ের মাঝে খুবই সতর্কতার সাথে থাকতে হয়।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটির বাসিন্দা ও সংগঠক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, প্রায় প্রতি বছরই কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি গেলে বা ছুঁইছুঁই অবস্থায় থাকলে কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়েগুলো খুলে পানি নিষ্কাশন করা হয় কর্ণফুলী নদীতে। কর্ণফুলী নদী অববাহিকায় হ্রদের পানি যায় সাগরে। এটা স্বাভাবিক একটা বিষয়ই। আর স্পিলওয়ে খুললে পানির চাপের ওপর নির্ভর করে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে নিষ্কাশনের পরিমাণ বাড়ানো হয়ে থাকে। ৬ ইঞ্চি জলকপাট খুলে দেওয়ায় ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে নিষ্কাশন হচ্ছে প্রায় আরও ৩২ হাজার কিউসেক। স্পিলওয়ের চেয়েও কয়েকগুন বেশি পানি নিষ্কাশন হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে।