কাপ্তাই লেকে বন্ধ মাছ শিকার, কর্মহীন মহালছড়ির জেলেরা

অপর্যাপ্ত বরাদ্দে নিবন্ধিতদের অসন্তোষ

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | শনিবার , ১৭ মে, ২০২৫ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ির প্রায় ৩ হাজার জেলে তাদের জীবন ও জীবিকা চালায় কাপ্তাই লেকে মাছ ধরে। ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের হৃদে মহালছড়ি, নানিয়াচরসহ বিভিন্ন এলাকায় এরা মৎস্য আহরণের সাথে জড়িত। প্রজনন মৌসুমে কাপ্তাই লেকে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে নিবন্ধিত ১৫শ ৬১ জেলে। নিবন্ধনের বাইরেও জেলে রয়েছে। যারা মূলত হৃদে মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল। মাছ ধরা বন্ধের মৌসুমে কর্মহীন জেলেদের প্রতি মাসে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় মাত্র ২০ কেজি চাল বরাদ্দ দিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছে মৎস্যজীবীরা।

মহালছড়িতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরার সাথে সম্পৃক্ত জেলে নূর মোহাম্মদ বলেন, আমার বাসায় মানুষ আছে ১১ জন। মাত্র ২০ কেজি চাল দিয়ে কোন কিছুই আমাদের হচ্ছে না। কোন প্রকারের মাছও মারতে পারছি না, মাছ ধরা বন্ধ। অনেক সময় নিষেধাজ্ঞা ৩ মাসের জায়গায় ৫ মাসও হয়ে যায়। কিন্তু খাদ্য শস্য সহায়তা আমরা তিন মাসেরই পাই। এটা দিয়ে আমাদের কিচ্ছু হয় না।

সরেজমিনে মহালছড়ি মৎস্য অবতরণ ঘাটে গেলে বেশ কয়েকজন জেলে অপর্যাপ্ত চাল বরাদ্দ নিয়ে তাদের অসন্তোষ কথা জানিয়েছেন। নিবন্ধিত জেলে ফজর আলী বলেন, এখানে মে মাসের ১ তারিখ থেকে মাছ ধরা বন্ধ। কাপ্তাই লেকে অনেক সময় পানি কম থাকায় তিন মাসের জায়গা নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে ৪ মাস বা ৫ মাসও করা হয়। কিন্তু আমাদের যে চাল দেয় তা তিন মাসের জন্য ২০ কেজি করে মোট ৬০ কেজি। এটা দিয়ে আমাদের সপ্তাহ খানেক বা দশ দিন চলে। সরকার যদি আমাদের বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয় তাহলে পরিবার নিয়ে কোন রকম তিন মাস বাঁচতে পারব। স্থানীয় জেলে রমজান আলী জানান, বছরের মধ্যে তিন মাস লেকে জাল ফেলা নিষেধ। এ সময় কেউ মাছ শিকারে যায় না।

কিন্ত সরকার জেলেদের যে বরাদ্দ বরাদ্দ দেয় দুই জনের সংসার হলে এক মাস চলত। কিন্ত কোন পরিবারে ৫ জনের নিচে সদস্য নেই। এখন যে চাল দেয় তা দিয়ে এক সপ্তাহ যায়। চাল দিলেও অন্যান্য বাজার সদাই কীভাবে করবে? কারণ মাছ ধরা না থাকলে তাদের আয় বন্ধ থাকে।

মহালছড়ি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আবুল খায়ের বলেন, যে ভর্তুকি দেয় তা পর্যাপ্ত না। প্রতিটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ৭ জন। ২০ কেজি চাল দিয়ে পুরো মাস যায় না। সরকার যদি জেলেদের প্রণোদনা যেন দ্বিগুণ করে তাহলে অনেক ভালো হয়।

মহালছড়ি, কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের উপকেন্দ্র প্রধান মো. নাসরুল্লাহ বলেন, কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে মহালছড়ির নিবন্ধিত জেলেদের জন্য মানবিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রতি মাসে ভিজিএফের ২০ কেজি চাল প্রদান করা হয়। যা আমাদের কাছে অপ্রতুল মনে হয়েছে। ইতোমধ্যে চালের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছে আবেদন করেছি। আশা করছি বরাদ্দ বাড়ানো বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে। ২০২৪২৫ অর্থ বছরে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপকেন্দ্রে মৎস্য আহরণ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসা; সৌহার্দ্য সমপ্রীতির বন্ধন
পরবর্তী নিবন্ধদাম্পত্য অধিকার