প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সফর কাতার থেকে ফিরে গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই সফরের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার। লুসাইল স্টেডিয়ামে ঢোকামাত্র অন্যরকম অনুভূতি তার, ‘লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার পরই একটি দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি ট্রফি হাতে টুকটুক করে হেঁটে কয়েক পা সামনে এগিয়ে উঁচিয়ে ধরলেন। সতীর্থরা উৎসবে মেতে উঠলেন’।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন তার সতীর্থ শাহেদা আক্তার রিপা, প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার শারমীন সুলতানা ও সুমাইয়া আক্তার।
সমপ্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কাতারে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন চার নারী ক্রীড়াবিদ। এটাই ছিল দেশের ইতিহাসে সরকার প্রধানের সঙ্গে ক্রীড়াবিদদের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।
সেখানে কাতার ফাউন্ডেশনের প্রধান শেখা হিন্দ, বিশ্বকাপের বিভিন্ন স্টেডিয়াম ঘুরে দেখা এবং পিএসজির অ্যাকাডেমিও ঘুরে দেখেন এই চার নারী ক্রীড়াবিদ। শুধু তাই নয়, কাতারে নারী ফুটবল লিগে খেলার জন্য বাংলাদেশের ফুটবলারদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্যও নাকি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন আফঈদা। তার কথা, ‘কাতারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা হলে আমি তাদের লিগে বাংলাদেশের ফুটবলারদের খেলার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছি।’ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আরও বলেন, ‘ক্রিকেট ফুটবল বাদে অন্যান্য খেলাগুলো অতটা সুযোগ সুবিধা পায় না আমাদের দেশে, আমরা এটা তুলে ধরেছি। উনারা আশ্বাস দিয়েছেন, তারা দেখবেন। বলে বুঝাতে পারবো না, আমরা কতটা খুশি। তারা আমাদের এতটা সম্মান দিয়েছেন, এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া।’ ফুটবলার শাহেদা আক্তার রিপা বলেন, ‘কাতার ফাউন্ডেশনের সিও–র (শেখা হিন্দ) সঙ্গে আমরা দেখা করি। তাকে আমরা আমাদের সব কথা খুলে বলেছি যে আমাদের কী কী সুযোগ–সুবিধা লাগবে। বিশেষ করে আমরা যখন ইনজুরিতে পড়ি, তখন তেমন সুযোগ সুবিধা থাকে না। ওদের ওখানে নেইমার–রোনালদোদের মতো খেলোয়াড়দের ইনজুরি নিয়েও কাজ করা হয়। এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আমাদের মেয়েদের জন্য ভালো মাঠ নেই, এ বিষয়েও বলা হয়েছে। শুধু ফুটবল নয়, সব খেলা নিয়েই বলা হয়েছে।’ জাতীয় নারী দলের এই ফরোয়ার্ড সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বললেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঠ ঘুরে দেখেছি। পিএসজির একটা ছোট ক্লাবে গিয়েছি। লুসাইল স্টেডিয়াম দেখেছি। সেই মাঠের ড্রেসিংরুমে গিয়েছি। অনেক কিছু দেখেছি। রয়্যাল ফ্যামিলি যেখানে বসে খেলা দেখে, যেখানে কেউ ঢুকতে পারে না। কিন্তু আমারে ঢুকতে দিয়েছে। আমরা খুব খুশি যে উনাদের ওখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছি। অলিম্পিক স্পোর্টস মিউজিয়াম দেখেছি।’ ক্রিকেটার শারমীন সুলতানার কথা, ‘এই প্রথম আমরা কোনও সরকার প্রধানের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে কাতার গিয়েছি। ওখানে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, অনেক কিছু দেখেছি। বিশেষ করে আমরা প্রথম দিন দেখা করেছি শেখা হিন্দের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি কাতার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা। তারা মূলত মেয়েদের ক্রীড়া নিয়ে কাজ করে। মেয়েরা কীভাবে খেলাধুলাতে উন্নতি করতে পারে, এই বিষয়ে তারা কাজ করে থাকে। দুটি স্টেডিয়ামে আমরা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। যার একটি এডুকেশন স্টেডিয়াম। ফুটবল বিশ্বকাপের পর যেটা ওদের নারী ফুটবলারদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এরপর স্পায়ার অ্যাকাডেমিতে গিয়ে একটা ইনডোর স্টেডিয়াম। এরপর লুসাইল স্টেডিয়ামে গিয়েছি, যেখানে ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল। শেখা হিন্দের সঙ্গে যখন দেখা করেছি, তাদের সঙ্গে আমাদের খেলাধুলা নিয়ে, আমাদের স্পোর্ট কীভাবে উন্নতি করতে হবে, ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছি।’ আরেক ক্রিকেটার সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘প্রথমে যখন শুনতে পাই আমরা স্যারের সঙ্গে কাতারে যাবো, এটা ছিল খুবই সৌভাগ্যের। সতীর্থ, পরিবারের সদস্য– সবাই আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে। সাধারণত আমরা যেটা জানি, কাতার ফুটবল প্রিয় দেশ। ক্রিকেটের সে রকম অবকাঠামো তাদের নেই। তবে শচিন টেন্ডুলকার ও বিরাট কোহলির মতো কয়েকজন বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারের ছবি আমরা সেখানে দেখেছি।’ তিনি যোগ করেন, ‘যখন আমরা শেখা হিন্দের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন আমরা বলে এসেছি– আপনি আসেন। এসে দেখেন আমাদের দেশে ক্রিকেটারদের কেমন চলা ফেরা। আমরা কীভাবে চলি, কেমন গাইডলাইনের মধ্যে আছি। উনি বলেছেন, যদি কখনও সুযোগ হয়, তাহলে উনি আসবেন। বিশেষ করে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ওদের ক্রিকেটটা সচল করা যায় কিনা। সেটা নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’ ক্রিকেটার সুমাইয়া বলে যান, ‘২০০৭ বা ২০১১ সালের দিকে উনি মেয়েদের ক্রিকেট চালুর কথা বলেছিলেন। কিন্তু ওখানে ক্রিকেট বল অনেক শক্ত হয় বলে ওটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উনি কথা দিয়েছে, উনি এটা চালু করবেন।’
কাতারে অ্যাকাডেমির বিষয়ে সুমাইয়ার কথা, ‘ওখানকার অ্যাকাডেমিতে দেখলাম, ছেলেমেয়েরা যখন ইচ্ছে খেলছে, আবার খাবার খেতে চলে যাচ্ছে। স্কুলের সময় স্কুলে যাচ্ছে। ওখানকার সবকিছু অনেক সুন্দর ছিল।’