ঘর থেকে জলজ্যান্ত মানুষটি বের হয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে– সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সবার পরিবারে ঠিক যেন এই আহাজারিটাই চলতে থাকে। রাঙ্গুনিয়ায় যেমন কিরণ দে’র মৃত্যুর ঘটনাটা। নিজ স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে রাঙামাটিতে আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছিলেন পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা কিরণ দে (৫০)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু তার আর ফেরা হল না। তার আগেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তার প্রাণ, হাসপাতালে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন তার স্ত্রী–সন্তানরা। একইভাবে মীরসরাইয়ে মহাসড়কে ট্রাকচাপায় প্রিয় শখের বাইকেই প্রাণ গেল মো. নঈমুল ইসলাম (২৪) নামের এক কলেজছাত্রের। উখিয়ায় ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন লিকু মানকিন (৩০) নামের এক যুবক।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী ভূমি অফিসের সামনে ইটবাহী ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে কিরণ দে প্রাণ হারান। এই ঘটনায় আহত হন নিহতের স্ত্রী অঞ্জনা দে (৪৫), ছেলে অনিক দে (১৮), মেয়ে রুবি দে (৭) ও সিএনজি টেঙি চালক মো. তারেক (৩০)। নিহত কিরণ দে চাদগাঁও মোহরা এলাকার অতুল দে’র ছেলে। তবে তিনি পরিবার নিয়ে পটিয়া ধলইঘাট এলাকায় থাকতেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিরণ দে রাঙামাটিতে তার আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সিএনজি টেঙি যোগে ফেরার পথে রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী ভূমি অফিসের কাছ এলে বিপরীত দিক থেকে আসা ইটবাহী ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিতে থাকা ড্রাইভারসহ চার যাত্রী গুরুতর আহত হয়। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে গেলে চিকিৎসক কিরণ দে’কে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চালক তারেক, অঞ্জনা দে’কে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহতের স্বজন টিটু দে বলেন, কিরণ দে আমার খালু। উনারা আমার বাড়ি রাঙামাটিতে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। ফেরার পথে এই ঘটনার কবলে পড়েছেন তারা।
এই ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম জানান, দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ঘটনার পরপরই পিকআপ ড্রাইভার পালিয়ে যায়। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, মহাসড়কে ট্রাকচাপায় প্রিয় শখের বাইকেই প্রাণ গেল মো. নঈমুল ইসলাম (২৪) নামের এক কলেজছাত্রের। নিহত নঈমুল উপজেলার নিজামপুর কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও উপজেলার চিনকিরহাট এলাকার দারুল বঙ ভূঁইয়া বাড়ির তোফাজ্জেল হোসেনের ছোট সন্তান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৪টার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় চট্টগ্রামমুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মো. আজিজ (৫৬) নামের একজন পথচারীও গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের বিএসআরএম সম্মুখস্থ এলাকায় বেপরোয়া গতির অজ্ঞাত একটি ট্রাক মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান হতভাগ্য যুবক। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য এক ব্যক্তিও গুরুতর আহত হন একই ঘটনায়।
নিহতের চাচাতো ভাই সালাউদ্দিন জানান, তার চাচাতো ভাই পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম একটি মুঠোফোন কোম্পানিতে চাকরি করত। শখের বাইকে করেই সে প্রয়োজনীয় সকল কাজ সারতো। সেই পরিবারের একমাত্র ছেলে। তার বাবা একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে সবাই এখন বাকরুদ্ধ।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার (ওসি) সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম গেছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে নিহতের লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। অজ্ঞাত ট্রাকটি চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
কঙবাজার প্রতিনিধি জানান, উখিয়ায় ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিকু মানকিন (৩০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুজন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার কুতুপালং আমগাছ তলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিকু মানকিন নেত্রোকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার ভবতপুর গ্রামের মৃত অবনী দে’র ছেলে। এই ঘটনায় ট্রাক চালক সন্তোষ চন্দ্র বর্মনকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি কুমিল্লার জেলে পাড়া গ্রামের মৃত নিবারন চন্দ্র বর্মনের ছেলে।
উখিয়া শাহপুরী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুল কবির জানিয়েছেন, বিপরীত দিক আসা একটি ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখী সংঘর্ষ হলে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত এবং দুইজন আহত হয়। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে কঙবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। তিনি আরো জানান, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করার পাশাপাশি ঘাতক ট্রাকটির চালককে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ায় জিপ গাড়ির সাথে সিএনজি টেঙির মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী–শিশুসহ ৩ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মনুফকির হাটের দক্ষিণ ছড়ারকুল নামক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন, বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ার টেঙিচালক আবদুল জব্বার (৭০), একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লস্কর পাড়ার তাহিয়া (৯) ও ২ নাম্বার ওয়ার্ডের হাজির পাড়ার সুফিয়া খাতুন (৪০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে শাহ জব্বারিয়া সড়কে মনুফকিরহাট বাজার থেকে সেনেরহাটমুখি সিএনজি টেঙির সাথে বিপরীতমুখী লাকড়িবাহী জিপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে টেঙিচালকসহ ৩ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা গুরতর আহত সুফিয়া ও তাহিয়াকে উদ্ধার করে উপজেলা সদরের এক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। দুর্ঘটনায় সুফিয়া খাতুনের একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্ক্ষাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার ব্যাপারে থানায় কেউ অবগত করেনি। এই ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।