প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীরবে–নিভৃতে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে সম্মানিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে অন্যরা অনুপ্রাণিত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যারা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ও অন্যান্য এলাকায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে চলেছেন, তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করার জন্য। তাদের জন্য নয়, বরং জনগণের কল্যাণের জন্য। কারণ তাঁরা কখনোই সামনে আসেন না বা আসতে চান না। নিজস্ব উদ্যোগে বা স্বপ্রণোদিত হয়ে যারা মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদের পুরস্কৃত করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় কথা।’ গত সোমবার দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার–২০২৪’ প্রদানকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
এ কথা সত্যি যে, বর্তমান সরকার দল নিরপেক্ষভাবে গুণীদের মূল্যায়ন করে আসছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য বিতর্ক থাকলেও স্বাধীনতা পুরস্কার বা একুশে পদক বা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্র, সমাজ, দেশের জন্য অবদান রাখছেন, তাদেরকেই বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। ফলে সমাজে গুণীজনেরা উৎসাহিত হচ্ছেন।
সমাজটা কাদের জন্য এত সুন্দরভাবে অগ্রসর হচ্ছে। কারা দেশের স্বার্থ নিজেদের স্বার্থের চেয়ে বড় করে দেখেন। কারা নিরলস পরিশ্রম করেন দেশের জন্য, মানবতার জন্য। কারা দেশকে বহির্বিশ্বের কাছে বড় করে তুলে ধরেন। কারা নিজেদের যোগ্যতায় দেশের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এসব বিবেচনা করে আমরা খুঁজে বের করতে পারি গুণী ব্যক্তিদের। সেই গুণী ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা সমাজ বা সরকারের দায়িত্ব হয়ে পড়ে। মনীষীরা বলেন, যে জাতি জ্ঞানী গুণীদের মূল্যায়ন করতে পারে না সে জাতি জ্ঞানী গুণী হতেও পারে না।
আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষ তাঁদের কর্মের মূল্যায়ন নিয়ে হতাশ। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, তিনি যোগ্যতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর আন্তরিকতার অভাব নেই। নিজেকে তো উজাড়ই করে দিচ্ছেন। কিন্তু বছর শেষে কর্মক্ষেত্রে যখন কর্মীদের মূল্যায়ন হয়, তখন তাঁর প্রতি ‘সুবিচার’ করা হয় না, এমন ভাবনা মনে আসে অনেক কর্মীরই। আবার উল্টো দিকে তাঁর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মনে করেন, কর্মীর কাজের ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়নই করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কর্মী তাঁর কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের চাহিদা সঠিকভাবে মেটাতে পারছেন না। কর্মীকে আর কী কী করতে হবে, তাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলা হয় না। এমন অবস্থায় কাজের ক্ষেত্রে কর্মী আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘কর্মীর কাজের মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সাধারণত বছরের শেষে কর্মী মূল্যায়ন–সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এই মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে কর্মীর বেতন বৃদ্ধি, কর্মীর উন্নয়ন ও পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। একটি স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন মূল্যায়ন কর্মীর গুণগত মানোন্নয়নে এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য পূরণে ভূমিকা পালন করে। সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মী যেমন সন্তুষ্ট হন, তেমনি পদ্ধতিগত অসংগতি এবং সঠিক মূল্যায়ন না হলে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তাই দায়িত্বটা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারই বেশি।’ এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক কাজের মূল্যায়ন। কিন্তু সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করতে হবে সরকারের বিভিন্ন পদে থাকা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। প্রান্তিক পর্যায়ের গুণী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। তৃণমূলে বা নগরে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা পদ–পদবি বা পুরস্কারের জন্য করেন না। নীরবে নিভৃতে তাঁরা কাজ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে এসব গুণীর মূল্যায়ন জরুরি।
সমাজচিন্তক, উদ্ভাবক, বিদ্বান, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক– সবাই হতে পারেন না। মেধা পরিশ্রম সাধনা যোগ্যতার ফলে এসব গুণী মানুষ তৈরি হয় সমাজে। সেই মানুষগুলোর পেছনেও থাকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অসংখ্য ত্যাগ। অতএব তাঁদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা মানে সমাজ নিজে সম্মানিত হওয়া। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীরবে–নিভৃতে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সময়োপযোগী। প্রকৃত গুণীদের মূল্যায়ন হোক–সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।