কাজের মাধ্যমে আশা তৈরি করতে হবে প্রতিরোধ করতে হবে আত্মহত্যা

| শনিবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আগামীকাল ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘কাজের মাধ্যমে আশা তৈরি করা। মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোহিত কামাল লিখেছেন, আত্মহত্যা একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা যা দূরবর্তী সামাজিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক ফলাফল। অনুমান করা হয় যে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৭০০ ০০০ এর বেশি আত্মহত্যা রয়েছে, এবং আমরা জানি যে প্রতিটি আত্মহত্যা অনেক মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

ক্রিয়ার মাধ্যমে আশা সৃষ্টি’ হল ২০২১২০২৩ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের জন্য ত্রিমুখী থিম। এই থিমটি একটি শক্তিশালী কল টু অ্যাকশন এবং অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে যে আত্মহত্যার একটি বিকল্প আছে এবং আমাদের কর্মের মাধ্যমে আমরা আশাকে উৎসাহিত করতে পারি এবং প্রতিরোধ শক্তিশালী করতে পারি।

কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করার মাধ্যমে, আমরা আত্মঘাতী চিন্তার সম্মুখীন ব্যক্তিদের সংকেত দিতে পারি যে আশা আছে এবং আমরা তাদের যত্ন করি এবং তাদের সমর্থন করতে চাই। এটি আরও সুপারিশ করে যে আমাদের কাজ যত বড় বা ছোট, তাদের জন্য আশা জোগাড় করতে পারে যারা সংগ্রাম করছে।

অবশেষে, এটি একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে যে আত্মহত্যা প্রতিরোধ একটি জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার এবং আত্মহত্যার মৃত্যুর হার কমানো নিশ্চিত করার জন্য জরুরী পদক্ষেপ প্রয়োজন। ডব্লিউএইচও তার অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে দেশগুলোকে এই দিকে কংক্রিট ব্যবস্থা নিতে।

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস (ডব্লিউএসপিডি) ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর সঙ্গে মিল রেখে আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্য করে এই বিষয়টির উপর মনোযোগ দেওয়া, কলংক হ্রাস করা এবং সংগঠন, সরকার এবং জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, একটি একক বার্তা দেওয়া যে আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৭ জন আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোরী বলে জানা গেছে। তাদের আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে পরীক্ষায় ফেল করা কিংবা আশানুরূপ ফল না করাকে দায়ী করা হয়।

কিন্তু কেন বাড়ছে আত্মহত্যা? এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ইদানীং পড়ালেখা ও ফলাফল নিয়ে আগের চাইতে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পড়াশোনা এখন পরিণত হয়েছে অস্থির সামাজিক প্রতিযোগিতায়। যেখানে মাবাবা সন্তানের পরীক্ষার ফলকে সামাজিক সম্মান রক্ষার হাতিয়ার বলে মনে করেন। অভিভাবকদের এই অতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চাভিলাষের কারণেই বোর্ড পরীক্ষায় পাস না করায় কিশোর কিশোরীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে বলে তাঁরা জানান।

শুধু মনোচিকিৎসক কিংবা মনোবিজ্ঞানী নয়, সবাই মিলে দায়িত্ব নিলে অনেকাংশে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, নিজের মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণতা আসতেই পারে। তখন কিছু কাজ করলে অন্যের সাহায্য ছাড়াও আত্মহত্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ সম্ভব। এক্ষেত্রে আত্মহত্যার ওয়ার্নিং সংকেতগুলো চিনতে হবে। নিজের ইতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলো খাতায় লিখে তালিকা করে বারবার দেখতে হবে। সামাজিক সম্পর্ক বাড়ানো প্রয়োজন, বিশেষ করে যারা বিপদের সময় সহায়তা করতে পারবেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। পরিবার বা কাছের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করা। নিজের পরিবেশকে আত্মহত্যার উপকরণমুক্ত করা। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে মানসিক স্বাস্থ্য প্রফেশনালদের সঙ্গে যোগাযোগ করা।

গবেষকরা বলছেন, মানসিক চাপই আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। প্রতিনিয়ত আমরা এমন অনেক মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করছি, যারা মানসিক চাপে থাকে, অথচ আমরা তা বুঝতে পারি না বা তারা নিজেরাও বুঝতে পারে নাএ যন্ত্রণা থেকে কীভাবে মুক্তি পেতে পারে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে আত্মহত্যা রোধে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে মানসিকভাবে শক্ত করা যাবে, মনকে দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যে কোনো সমস্যা বা অপ্রাপ্তিতে হতাশ না হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে