কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ

| রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, মঙ্গলবার (১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকৈশোরতারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সমাজচিন্তক। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যার স্থান চিরভাস্বর। তার সাহিত্যকর্ম প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, সমাজ পরিবর্তনের পথ দেখায়। কাজী নজরুল ইসলাম একটা প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলনের নাম, যুগে যুগে এক জীবন্ত আদর্শ। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত আর দর্শনেও নজরুলের অনবদ্য উপস্থিতি বর্ণাঢ্য করেছে বাংলা সাহিত্যকে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের সূচনা হয়েছিল দারিদ্র্য আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। ছোটবেলায় পিতৃহারা নজরুল মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেছেন, লেটো গানে অংশ নিয়েছেন। কঠিন জীবনসংগ্রাম তাকে দমাতে পারেনি। তিনি সাহিত্য ও সংগীতের মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য, শোষণ, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। খবর বাসসের।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য জীবনের সূচনা ঘটে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। তৎকালীন প্রভাবশালী কবিসাহিত্যিকদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ যা বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি করে নতুন এক ধারা। এই কবিতায় কবি নিজের আত্মাকে রূপ দিয়েছেন এক বিরাট শক্তিতে, যিনি অন্যায়, শোষণ ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেন সাহসের ঘোষণা। এই কবিতা কবি কাজী নজরুল ইসলামকে শুধু সাহিত্যের জগতে নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনেও পরিচিত করে তোলে। তার লেখা প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গণচেতনাকে উজ্জীবিত করে।

কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি প্রায় ৪ হাজার গান লিখে ও সুর দিয়ে বাংলা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার গানে আছে প্রেম, প্রতিবাদ, ধর্মীয় ভাব, আধ্যাত্মিকতা এবং সাম্যবাদের স্পষ্ট প্রকাশ। কাজী নজরুল ইসলাম তার গদ্য সাহিত্যে তুলে ধরেছেন সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। তার উপন্যাস ‘মৃত্যুক্ষুধা’ ও ‘কুহেলিকা’ প্রগতিশীল চিন্তার ধারক। যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রাজবন্দির জবানবন্দি প্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থে তিনি সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতির নির্ভীক সমালোচনা করেছেন।

আজকের পৃথিবীতে যখন বিদ্বেষ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য বাড়ছে, তখন তার অমর সৃষ্টি আমাদের জন্য ‘আলোর দিশারি’। কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর দ্যুতি। তার জন্মবার্ষিকী স্মরণ করিয়ে দেয় যে কবির আদর্শ ও ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। বৈষম্য, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক অবিচার যখন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের বিষয়, তখন তার জীবনদর্শন আলো জ্বালাতে পারে।

স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লায় জাতীয় অনুষ্ঠান : আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো/তবু আমারে দেবো না ভুলিতে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই চয়নটুকু চিরভাস্বর হয়ে আছে কুমিল্লাবাসীর হৃদয়ে। ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান : কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’এ প্রতিপাদ্য নিয়ে কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লায় এবার জাতীয় পর্যায়ে নানা আয়োজনে পালিত হবে তিনদিন ব্যাপী ১২৬ তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। সম্পন্ন হয়েছে সকল প্রস্তুতি। এ নিয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে কুমিল্লায়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা। কুমিল্লায় বিচরণের মধ্য দিয়ে নজরুল হয়ে উঠেছিলেন বিদ্রোহী কবি। কবির প্রেম, বিয়ে, সুরকারগায়ক, অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠার অনেক কিছুর প্রথম এই কুমিল্লা। দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় ১১ মাস কুমিল্লায় অবস্থান করেছেন। এই দীর্ঘ অবস্থান ঘিরে নজরুলের জীবনের মোড় ঘুরার প্রেক্ষাপট এই কুমিল্লাতেই সৃষ্টি হয়েছিল।

শহরের কান্দিরপাড়র ইন্দ্রকুমার সেনের বাড়ি, ধর্মসাগর পাড়, রাণীর দীঘির পাড়, মহেশাঙ্গন, দারোগাবাড়ি, টাউনহল ময়দান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ শচীনদেব বর্মনের চর্থার রাজবাড়ি, নবাব বাড়িসহ কুমিল্লার আনাচেকানাচে এবং মুরাদনগরের দৌলতপুরে তার সদর্প পদচারনার অসংখ্য স্মৃতি কুমিল্লাবাসীর হৃদয়ে জেগে আছে। ১৯২১ সালের ২১ নভেম্বর ব্রিটিশ নেতা প্রিন্স অব ওয়েলস এর কলকাতায় আগমন উপলক্ষে ভারতীয় কংগ্রেস হরতাল ডাকে। ওই হরতালে কবি নজরুল গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে প্রতিবাদী গানে মিছিল করেন। এ অপরাধে রাজগঞ্জ থেকে তাকে আটক করা হয়। এই ঘটনাই কবির বিদ্রোহী কবিতার প্রেক্ষাপটের অনেক অনুসঙ্গেও একটি বলে মনে করেন গবেষকরা।

এছাড়া কবির জীবনে কুমিল্লার মুরাদনগরের খাঁ বাড়ির নার্গিস আর এই শহরের পশ্চিম কান্দিরপাড়ের আশালতা সেন গুপ্তা ওরফে প্রমীলা নামের দুই নারী এসেছিলেন জীবনসঙ্গিনী হয়ে। নার্গিস ও প্রমীলা কবির জীবনে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। এ সময়ে তিনি কুমিল্লায় বসে অজস্র কবিতা ও গান রচনা করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে শিল্প কারখানাকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে : উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬