কাজী আবুল কাসেম – প্রথম বাঙালি মুসলমান চিত্রকর। শিল্পকলায় হাতেকলমে শিক্ষা ছিল না তাঁর, কিন্তু আপন প্রচেষ্টায় তিনি সফল চিত্রকর হয়ে উঠেছিলেন। কেবল চিত্রকর নয়, উপমহাদেশের সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি একজন সফল ব্যঙ্গচিত্রী হিসেবেও সুপরিচিত।
কাজী আবুল কাসেমের জন্ম ১৯১৩ সালের ৭ মে যশোর জেলার উমেদপুর গ্রামে। শৈশব থেকেই ছবি আঁকায় ঝোঁক ছিল। কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও প্রথমবার বয়স আঠারোর কম হওয়ায় এবং দ্বিতীয়বার অর্থাভাবে সেখানে পড়তে পারেন নি। পরবর্তী সময়ে এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায় তিনি ‘এন মিত্র অ্যান্ড কোম্পানি’ নামের একটি কমার্শিয়াল আর্ট স্টুডিওতে চাকরি পান। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় এবং আপন যোগ্যতায় কয়েক বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান চিত্রকর্মী হয়ে ওঠেন আবুল কাসেম। ‘আজাদ’, ‘সওগাত’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘বসুমতি’, ‘বঙ্গলক্ষ্মী’, ‘মোহাম্মদী’, ‘হানাফী’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর চিত্র ও কার্টুনচিত্রে শিল্পীর বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধ ও তীক্ষ্ণ সমাজসচেতনতার পরিচয় ফুটে ওঠে। বোদ্ধামহল অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছিলেন একজন মুসলমান চিত্রকরের আবির্ভাব।
আবুল কাসেমের শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন ও তাঁর ‘সওগাত’ পত্রিকাটির ভূমিকাও বিশেষভাবে স্মরণ্য। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আবুল কাসেম প্রথম প্রতিবাদী কার্টুন এঁকেছিলেন। ‘হরফ-খেদাও’ শিরোনামে ‘সৈনিক’ পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনটি সে সময় দারুণ আলোড়ন তুলেছিল। শিশুতোষ বইয়ের সজ্জাকর, রম্য ও পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ এবং অভ্যন্তরীণ অলংকরণের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। বহু গ্রন্থসজ্জার কাজ করেছেন তিনি। পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদ বা শীর্ষচিত্রও করেছেন। করেছেন শিশুদের বইয়ের অলংকরণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘কাজলা পুশি’, ‘পুথির মালা’, ‘সবুজ ছড়া’, ‘ব্যাঙ ও ওস্তাদের জলসায়’ প্রভৃতি। গোলাম মোস্তফার ‘আলোকমালা’ বইটির প্রচ্ছদ তাঁর অসাধারণ কর্মনৈপুণ্যের পরিচয় বহন করে। তাঁর অনুসৃত পথেই ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক পশ্চাৎপদতাকে পেছনে ফেলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী চিত্রকর হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ২০০৪ সালের ১৯ জুলাই প্রয়াত হন নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী কাজী আবুল কাসেম।