কাচ্চি ভাইয়ের স্টোর রুমেই মিলেছে বেশি লাশ

আগুনের ঘটনায় পুলিশের মামলা, গ্রেপ্তার ৪ জন দুদিনের রিমান্ডে

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৩ মার্চ, ২০২৪ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর বেইলি রোডে বেজমেন্টসহ ৮ তলা বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ আগুনে নারীপুরুষ ও শিশুসহ ৪৬ জন মারা গেছেন। ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেইলি রোডে আগুন নিয়ন্ত্রণের পর বেশিরভাগ লাশ ভবনের দ্বিতীয় তলার কাচ্চি ভাই দোকানের একটি স্টোর রুম থেকে উদ্ধার করা হয়। দেখে বোঝা যাচ্ছে, মানুষজন বাঁচার জন্য ওই স্টোর রুমে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। গতকাল শনিবার ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাজাহান সিকদার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একে একে ১৩ ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণের পরে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করা হয়।

গ্রেপ্তার ৪ জন দুদিনের রিমান্ডে : গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে দুদিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনছার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে মহানগর হাকিম নুরুল হুদা চৌধুরী শুনানি শেষে তাদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ভবনটির নিচতলায় থাকা চাকফির দোকান চুমুক রেস্তোরাঁর দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন, কাচ্চি ভাইয়ের বেইলি রোড শাখার ব্যবস্থাপক জয়নুদ্দিন জিসান ও গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল।

শুনানিতে গ্রেপ্তারদের পক্ষ থেকে রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদন করা হয়। তাদের আইনজীবীরা বলেন, তারা সাধারণ কর্মচারী ভবনের মালিক নন। এ ভবনে রেস্তোরাঁ দেওয়ার অনুমোদন ছিল কিনা তা তাদের জানার কথা নয়।

এর আগে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় রমনা থানায় মামলা হয়েছে। অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে শুক্রবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করেছে। মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে চারজনকে। এদের মধ্যে রিমান্ডে যাওয়া চারজনের মধ্যে দুজন আনোয়ারুল হক ও মুন্সি হামিমুল আলম বিপুলের নাম রয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্‌ আলম মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, রিমন ও জিসানকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনের বাইরে এজাহারে আসামির তালিকায় আসা বাকি দুজন হলেন আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের স্বত্বাধিকারী (নাম দেওয়া হয়নি) এবং কাচ্চি ভাইয়ের মালিক সোহেল সিরাজ। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আটজন ভর্তি আছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আটজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

আগুনের সূত্রপাত হিসেবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আটতলা গ্রিন কোজি কটেজের নিচতলায় অবস্থিত ‘চুমুক’ নামের চাকফির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে সংগৃহীত একটি ভিডিওকে তদন্তের বড় আলামত হিসেবে দেখছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনে নিচতলায় আগুন লেগেছে আর তা নেভানোর চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।

কাচ্চি ভাইয়ের রেস্টুরেন্ট : ভবনের দ্বিতীয়তলায় কাচ্চি ভাইয়ের রেস্টুরেন্টের ভেতরে একটি স্টোর রুম ছিল। সেখানে হোটেলের কিছু মালামাল রাখা হতো। সেই স্টোর রুম থেকে বেশিরভাগ লাশ উদ্ধার করা হয়। মনে হচ্ছে মানুষগুলো আগুন থেকে বাঁচার জন্য ওই স্টোর রুমে প্রবেশ করেছিল। আগুনে সে স্টোর রুমের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। স্টোর রুম থেকে উদ্ধার করা সব নিথর দেহে কোনো আগুনে পোড়া ছিল না।

ভবনটি বেজমেন্টসহ ৮ তলা। পুরোটাই কমার্শিয়াল। এর ছাদে একটি অফিস ও মসজিদ ছিল। আগুন লাগার পরপরই অনেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচের নামতে না পারায় ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় সিঁড়ি থেকে বেশ কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। মনে হয় সে মানুষগুলো নামতে গিয়ে মারা যায়। দুজনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে সিঁড়িতে থেকেই।

৪৩ জনের লাশ বুঝে পেলেন স্বজনরা : অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৬ জনের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ৪৩ জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, বাকি তিনটি লাশের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দুটি এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রয়েছে একজনের লাশ।

এখন ঢাকা মেডিকেলে যে দুজনের লাশ আছে, তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। অপরদিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে থাকা সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর পরিচয় জটিলতায় তার লাশও হস্তান্তর করেনি কর্তৃপক্ষ। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ওই তিনজনের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন হেদায়েতুল ইসলাম।

বৃষ্টি নাকি অভিশ্রুতি সুরাহা হবে আদালতে : অগ্নিকাণ্ডে নিহত নারী সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর মরদেহ এখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে তার নাম জানা যায় বৃষ্টি খাতুন। অন্যদিকে তিনি তার নাম ব্যবহার করতেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। নামের এই জটিলতার কারণে তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হবে। পরে নামপরিচয় ও মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্ত্রী-সন্তানসহ নিথর দেহে কক্সবাজারে ফিরলেন শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল
পরবর্তী নিবন্ধছুটির দিনে ভাড়া হয়ে যায় দ্বিগুণ