ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাকে অব্যাহতি দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধরের জেরে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। র্যাবের অভিযানে তার কাছে মদ ও ওয়াকিটকি পাওয়া যায়। এরপর গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তারের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল প্রথম প্রহরে তাকে কারাগারে হস্তান্তর করে র্যাব। র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল রকিবুল হাসান গতকাল সকালে জানান, ইরফানকে রাত দেড়টার পরে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে তার সহযোগী ও হাজী সেলিমের প্রোটোকল অফিসার এ বি সিদ্দিক ওরফে দিপুকে তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) সত্যব্রত শিকদার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ধানমন্ডি থানার পুলিশ এ বি সিদ্দিকীকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
সেলিম পুত্রের বিষয়ে ঢাকার জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ইরফান কারাগারে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। করোনাভাইরাস মহামারীকালে কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো নতুন বন্দিকে একটি সেলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ইরফানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করার কথা ছিল র্যাবের। গতকাল দুপুরের মধ্যে মামলাগুলো করার কথা ছিল।
পুরান ঢাকার তৃতীয়বারের এমপি হাজী সেলিমের দ্বিতীয় সন্তান ইরফান নিজেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর। আরেক সংসদ সদস্য নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীর জামাতা তিনি। বিদেশে লেখাপড়া করে আসা ইরফান বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মদিনা গ্রুপের পরিচালকদের একজন। ইরফান ও তার সহযোগীদের হাতে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা মারধরের শিকার হওয়ার জের ধরে গত সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সোয়ারিঘাটের দেবদাস লেনে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে র্যাব। কিছুক্ষণের মধ্যে ভবনের চতুর্থ তলা থেকে ইরফান ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে আটক করে। ওই ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ইরফান সেলিম থাকেন জানিয়ে বিকালে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার বলেন, ওই দুই ফ্লোর থেকে দুটি অবৈধ বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার পাওয়া গেছে। আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো লাইসেন্স নেই। আর ওয়াকিটকিগুলোও অবৈধ, কালো রঙের এসব ওয়াকিটকি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করতে পারেন। পরে মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করার অপরাধে ইরফান এবং তার দেহরক্ষী জাহিদকে ছয় মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় সারওয়ার আলম নেতৃত্বাধীন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে রাত সোয়া ৮টার দিকে ইরফান ও তার দেহরক্ষীকে ওই ভবন থেকে বের করে টিকাটুলীতে র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
দেবীদাস লেনের ভবনে অভিযানের মধ্যেই চকবাজারের আশিক টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে ইরফানের ‘নির্যাতন কেন্দ্রের’ সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় র্যাব। ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ইরফানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৬তলা ওই ভবনের ছাদের একটি কক্ষে অভিযান চালানো হয়। সেখানে হকিস্টিক, হাতকড়া, ছোরা, মোটা রশি, গামছা, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার তারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম এবং ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। এখানে বিভিন্নজনকে এনে নির্যাতন করতেন ইরফান। পরে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ১৬ তলায় মদিনা ডেভেলপার কোম্পানির অফিস রয়েছে। তার উপরে ছাদে একপাশের বড় একটি কক্ষে থেকে ‘নির্যাতনের’ বিভিন্ন অস্ত্র-সরঞ্জাম জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছিলেন র্যাব সদস্যরা। কম্পিউটার মনিটর-সোফা দিয়ে সাজানো এই কক্ষের পূর্ব পাশে রয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা।