কসাই জিহাদকে নিয়ে ঘটনাস্থল দেখলেন ঢাকার গোয়েন্দারা

এমপি আনার হত্যা

| মঙ্গলবার , ২৮ মে, ২০২৪ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে কলকাতায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তকারী দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। কলকাতার বিধাননগরের নিউ টাউন এলাকার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক সঞ্জিভা গার্ডেনসে এমপি আনারকে হত্যা করা হয় বলে এখন পর্যন্ত দুই দেশের পুলিশ জানতে পেরেছে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, গতকাল সোমবার দুপুরে হারুনের নেতৃত্বে ঢাকার তদন্তকারীরা সঞ্জিভা গার্ডেনসে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত স্পটগুলো ঘুরে দেখেন। পরে সেখানে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এমপি আনার হত্যার ঘটনাকে ‘ঠান্ডা মাথায় খুবই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, এই সেই স্থান যেখানে আমাদের সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তার দেহ টুকরো টুকরো করার পর গায়েব করে ফেলা হয়েছে। এমন পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমি আমার জীবনে দেখিনি। খবর বিডিনিউজের।

আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে রোববার সকালে একটি ফ্লাইটে কলকাতায় পৌঁছায় ডিবির তিন সদস্যের তদন্ত দল। হারুন ছাড়াও এ দলে রয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান।

বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীন। হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা এবং লাশ গায়েবের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। কলকাতায় গ্রেপ্তার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে লাশ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হত্যার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।

গতকাল সঞ্জিভা গার্ডেনস পরিদর্শনের পর ডিবির হারুন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মামলা নিয়ে কাজ করছে দুই দেশের পুলিশ। আমরা অবশ্যই এর নেপথ্য রহস্য উদঘাটন করে ছাড়ব।

গণমাধ্যমে অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে আনার ও শাহীনের দ্বন্দ্বের কারণ স্বর্ণ চোরাচালান বলা হলেও এ বিষয়ে মুখ খুলছে না পুলিশ। আবার কিসের ব্যবসা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, তা নিয়েও কোনো ধারণা দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও খুন হওয়ার আগে পরে ‘কী কী ঘটেছে’ তার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ভারতীয় গোয়েন্দা এবং বাংলাদেশি কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে ২২ মে আনার হত্যার কথা গণমাধ্যমকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তারপর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে রোমহর্ষক নানা তথ্য। দুই দেশের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১২ মে আনার কলকাতায় গিয়ে এক বন্ধুর বাসায় উঠেন। পরদিন বৈঠক করার জন্য আখতারুজ্জামান শাহীনের নিউটাউনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে হাড়মাংস আলাদা করে গুম করে ফেলে, যেন কোনো প্রমাণ না থাকে।

আনারের লাশের কোনো হদিস মেলাতে পারেনি কলকাতা পুলিশ। এ ঘটনায় জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করলেও আনারের লাশের একটি টুকরোও উদ্ধার হয়নি এখনও। গতকাল সঞ্জিভা গার্ডেনস পরিদর্শনের সময় কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় কসাই জিহাদকে সঙ্গে পায় ঢাকার তদন্তকারীরা।

এ বিষয়ে হারুন বলেন, কলকাতার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে এখানে এসেছি আমরা। খুনের পর লাশ কেটে তারা কোথায় ফেলেছে এবং কীভাবে সেগুলো উদ্ধার করা যায়, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। কলকাতা পুলিশ যেভাবে আমাদের সহায়তা করছে তাতে আমরা আশাবাদী, লাশ খুঁজে পাব আমরা।

এমপি আনার হত্যা মামলার হোতাকে ধরার জন্য ইন্টারপোল ও কলকাতার অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রচেষ্টা যেন আরও জোরদার হয়, সে লক্ষ্যেই ভারতে এই সফর বলে মন্তব্য করেন ডিবির প্রতিনিধি দলের প্রধান। দুই দেশের গোয়েন্দারাই আখতারুজ্জামানকে এ হত্যাকাণ্ডের হোতা বলছে। এ বিষয়ে গতকালও কথা বলেন হারুন। তিনি বলেন, মূল ষড়যন্ত্রকারী আখতারুজ্জামান সম্ভবত কাঠমান্ডু থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। ইন্টারপোলের মাধ্যমে আমরা তার অবস্থান জানার চেষ্টা করছি। আমরা (পশ্চিমবঙ্গের) সিআইডি অফিসে যাব। সেখানে সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। আরও তথ্য পাওয়া যায় কিনা, সে জন্য গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে (জিহাদ) জিজ্ঞাসাবাদ করব আমরা।

এনডিটিভি লিখেছে, বাংলাদেশি সংসদ সদস্য আনার কলকাতায় হত্যার শিকার হওয়ার পর হাড় হিম করা বর্ণনা উঠে আসছে, যিনি ভারত আসার পর ১৩ মে থেকে নিখোঁজ হন। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, হত্যার পর হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ব্যাগ ও সুটকেসে ভরে তা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাশের সন্ধানের জন্য আকুতি জানিয়ে যাচ্ছে এমপি আনারের পরিবার। এখন লাশ বা তার টুকরো উদ্ধারের একমাত্র ভরসা কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ।

আনন্দবাজার বলছে, ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চারজন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।

আনারের খুনের ঘটনায় বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরা হলেন আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া (৫৬), তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্টি রহমান (২২)। ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে এই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড় থেকে সরে যেতে মাইকিং, নগরে ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র
পরবর্তী নিবন্ধনগর ও বোয়ালখালীতে খালে পড়ে দুজনের মৃত্যু