কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না

| শুক্রবার , ৯ মে, ২০২৫ at ১০:০০ পূর্বাহ্ণ

শিল্প খাতে করছাড় বা অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আর থাকছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্ত মেনে আসছে অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে সেই ক্ষমতা বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা যাচ্ছে জাতীয় সংসদের কাছে। নতুন ২০২৫২৬ অর্থবছর থেকে শুধু জাতীয় সংসদের মাধ্যমেই করছাড় বা অব্যাহতি দেওয়া যাবে; সংসদ না থাকলে তখন রাষ্ট্রপতির হাতে এ ক্ষমতা থাকবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার এনবিআর প্রকাশিত ‘কর ব্যয় নীতিমালা এবং এর ব্যবস্থাপনা কাঠামোতে’ এমন বিধি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নীতিমালা ও কাঠামোর আইনগত রূপ দিতে কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো অর্থবিলের সঙ্গে অনুমোদনের প্রদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি। খবর বিডিনিউজের। কর্মকর্তারা বলেন, এখন সংসদ না থাকায় তা সংশ্লিষ্ট কর আইনগুলোয় অন্তর্ভুক্ত করতে অধ্যাদেশ আকারে জারির পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে এনবিআরের নীতি নির্ধারক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুবিধা নিয়ে কর অব্যাহতি দেওয়ার সমালোচনা দীর্ঘদিন থেকে কর আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা।

আইএমএফও চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় এনবিআর কী পরিমাণ কর ব্যয় বা অব্যাহতি ও করছাড় দিয়ে থাকে তা বিশ্লেষণ করতে বলেছে। সেটির নিরিখে একটি কাঠামো তৈরির শর্ত জুড়ে দেয়। এরপর এনবিআর এর আগের কয়েক অর্থবছরের কর ব্যয় বিশ্লেষণ করেছে। এবার এসে কর ব্যয়ের নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কাঠামো প্রকাশ করল, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরের প্রস্তাব করেছে।

নতুন নীতিমালায় কর ব্যয় অনুমোদনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান আয়কর আইন, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন এবং কাস্টমস আইনের মাধ্যমে এনবিআরকে দেওয়া কর অব্যাহতির ‘সব ক্ষমতা রহিত করা হবে’। বার্ষিক জাতীয় বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর আইনসংশ্লিষ্ট যেকোনো ‘কর ব্যয় অনুমোদনের চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবে জাতীয় সংসদ’। সংসদ না থাকলে কর ব্যয়সংক্রান্ত বিধান জারির ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত থাকবে। তবে ‘বৃহত্তর জনস্বার্থে (নিত্যপণ্য ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ)’ অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা জরুরি প্রয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে সাময়িক কর ব্যয় (অব্যাহতি) অনুমোদন করতে পারবেন বলে এতে বলা হয়।

এভাবে অনুমোদিত কোনো কর ব্যয় যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে সেটির মেয়াদ কোনোভাবেই জারির তারিখ থেকে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের শেষ দিনের অতিরিক্ত হবে না বলে নতুন এ নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো কর ব্যয়কে যে অর্থবছরে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ছাড় দেওয়া হয়েছে, ওই অর্থবছরের পরও ওই কর ব্যয় কার্যকর রাখতে হলে তা সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে।

বর্তমানে প্রজ্ঞাপন বা আদেশের মাধ্যমে অনুমোদিত যেসব কর ব্যয়ের কোনো মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্ধারিত নেই, সেসব কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট সব প্রজ্ঞাপন বা আদেশ অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বারা ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে বলে কর ব্যয় নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সেসব কর ব্যয় অনুমোদন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, প্রতিবছর অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা জাতীয় সংসদে একটি বার্ষিক কর ব্যয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। প্রতিবেদনে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেকর ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণ এবং বিদ্যমান কর ব্যয়গুলোর মধ্যে প্রতি বছর কমপক্ষে একপঞ্চমাংশের ফলাফল মূল্যায়ন, যাতে প্রতিটি কর ব্যয়কে প্রতি পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে একবার মূল্যায়ন করা হয় এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের স্ত্রীর ৫ বাড়ি-ফ্ল্যাট-প্লট জব্দের আদেশ
পরবর্তী নিবন্ধ৩ মাসের বেতন বাকি শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ