কর্মকর্তাদের কলম বিরতি, চট্টগ্রাম কাস্টমসে অচলাবস্থা

পণ্য খালাস ব্যাহত, সরবরাহ সংকটে দাম বাড়ার আশঙ্কা আমদানিকারকদের গুণতে হচ্ছে ৪গুণ পোর্ট ডেমারেজ

জাহেদুল কবির | সোমবার , ১৯ মে, ২০২৫ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে কর্মকর্তাদের কলম বিরতির কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে পণ্য খালাসেও। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার জট নিরসনে সরকারি উদ্যোগও ভেস্তে যেতে বসেছে। অপরদিকে আমদানিকারকদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস নিতে না পারায় গুণতে হচ্ছে পোর্ট ডেমারেজ। এছাড়া জরুরি খাদ্যপণ্য যথাসময়ে খালাস না নিতে পারায় বাজারে সাপ্লাই চেইনে প্রভাব পড়তে পারে বলছেন আমদানিকারকরা। ফলে পণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টি হয়ে দামও বাড়তে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে প্রণীত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ জারির প্রতিবাদে গত ১৫ মে থেকে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় কলমবিরতি পালন করছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। কলম বিরতির এই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত মোট ৬ ঘণ্টা কাজ করেননি কর্মকর্তারা। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমসে সেবাগ্রহীতারা একপ্রকার অলস সময় পার করেন। কয়েকজন আমদানিকারক বলেছেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের এই কলম বিরতি দায়িত্বহীনতার পরিচয়। আন্দোলনের মাধ্যমে তারা দেশের অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দিতে চায়। আমরা ব্যবসায়ীরা মাঝখানে ভোগান্তিতে পড়ছি। কাস্টমস কর্মকর্তাদের তো এখানে কোনো লোকসান নেই। তারা বহাল তবিয়তে থাকবেন, বেতনও চলছে। এখন তো নতুন করে আমাদের ওপর চারগুণ পোর্ট ডেমারেজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন যে আমরা যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে পারছি না, এখানে আমাদের দায় কোথায়? আমরা কি লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবো? এভাবে কলম বিরতি পালন না করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের উচিত, তাদের ঊর্ধ্বতনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দাবি দাওয়ার বিষয় থাকলে সেটি সমাধান করা। ওনাদের কারণে আমরা জিম্মি হয়ে পড়ছি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পণ্য আমদানিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিল অব এন্ট্রি এবং রপ্তানিতে ৫ হাজার বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হয়। কর্মকর্তাদের কলমবিরতির কারণে চার ভাগের একভাগ কাজও হচ্ছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে আমাদের এখানেও কলমবিরতি হচ্ছে। আজ (গতকাল) ৬ ঘণ্টা কলমবিরতি কর্মসূচি ছিল। আগামীকাল (আজ) একই সময় পর্যন্ত কর্মসূূচি চলবে।

এদিকে এনিবআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে অধ্যাদেশ জারি করার ফলে বিরাজমান পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে যৌক্তিক সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ফোডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশন। গতকাল এসোসিয়েশন সভাপতি মো. মিজানুর রহমান এবং মহাসচিব এসএম সাইফুল আলম এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সকল বন্দরে কার্যক্রম যথাযথভাবে চলমান না থাকায় আমদানিরপ্তানি বাণিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সার্বিক বিষয়ে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারগণ অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় বন্দরে জায়গা স্বল্পতার কারণে পণ্যজটের সৃষ্টি হচ্ছে। জরুরি সেবা বিঘ্নিত এবং জরুরি রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে সরকার যেমন হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকার কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন, যা দেশের সার্বিক উন্নতির অন্তরায়। তাই জরুরি ভিত্তিতে সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা করে বাস্তব ভিত্তিক সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি বলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস্‌ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশন মনে করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক কর্মকর্তা অসুস্থ, পৌনে ৪ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন আটকা
পরবর্তী নিবন্ধঅভিযানে যাওয়ার পথে হামলার শিকার পুলিশ