এই নশ্বর পৃথিবীতে শুধুমাত্র হাতেগোনা কিছু মানুষ আছে, যারা তাঁদের জীবদ্দশায় নিজ কর্ম গুণে নিজের অমরত্ব নিশ্চিত করেছেন। তেমনই একজন মানুষ হলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নাম ড. মাহবুবুল হক। তিনি একাধারে একজন লেখক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, অনুবাদ, পাঠ্যবই রচনা ও সম্পাদনা করে দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি একাধিক জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যার মধ্যে নজরুল পদক, মধুসূদন পদক, মুক্তিযুদ্ধ পদক, ফিলিপস পুরস্কার, রশীদ আল ফারুকী সাহিত্য পুরস্কার। প্রবন্ধ–সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৯ সালে গবেষণা বিভাগে একুশে পদক লাভ করেন। বাংলাদেশ, ভারত ও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তার প্রায় চল্লিশটিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ড. মাহবুবুল হক বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০১২ ও ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের বাংলা শিক্ষাক্রম ও বাংলা পাঠ্যবই প্রণয়নে তিনি আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বাংলা পাঠ্য বইয়েরও রচয়িতা তিনি। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি গবেষক হিসেবে ড. মাহবুবুল হক বিশ্বভারতী, কল্যাণী, পাতিয়ালা, কলকাতা, যাদবপুর, গৌড়বঙ্গ ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ত্রিপুরায়, কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে ও বাংলা একাডেমিতে ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস ও ফোকলোর বিষয়ে বিভিন্ন সম্মেলন ও সেমিনারে অংশ নিয়ে প্রচুর গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ড. মাহবুবুল হকের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।