কর্ণফুলী নদী রক্ষার্থে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে

| রবিবার , ১২ মে, ২০২৪ at ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ কর্ণফুলী নদী দখলে দূষণে বিপর্যস্ত। নানাভাবে দখল হয়েছে নদী এবং এখনো হচ্ছে। আমরাই লিখেছি আজাদীতে, ‘দূষণ থেমে নেই বহু বছর ধরে। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদী উদ্ধারে বিভিন্ন সময় বহু আলোচনা হয়েছে। উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। শোনা গেছে, অনেক প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস বাণী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি। বিপর্যস্ত কর্ণফুলীর শেষরক্ষা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কর্ণফুলী গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা’।

গত ৯ মে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেছেন, কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করতে হবে। সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতি মেলার ১৮তম আসরের দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। তাঁর ভাষণে তিনি বলেন, আমরা নানা আন্দোলনের কথা জানি, অনেক আন্দোলন সফল হয় আবার কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়। কিন্তু কর্ণফুলী ও চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবেশ রক্ষার এই সামাজিক আন্দোলন ব্যর্থ হলে পুরো জাতি ব্যর্থ হবে। সেই সাথে আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য ধ্বংস ডেকে আনবো। সেই পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে দেব না। তাদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করতে হবে। কর্ণফুলীর রক্ষায় যে কোনো ধরনের আয়োজনে সিএমপি সব সময় সাথে থাকবে এমন আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের আন্দোলনে আমরা সক্রিয়ভাবে জড়িত আছি। কারো ভয়ভীতিতে পিছিয়ে আসার কারণ নেই। অন্যদিকে ১০ই মে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানও একই আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেবো।

আমরা জানি, কর্ণফুলী শুধু চট্টগ্রামবাসীর নয়, এটি সমগ্র দেশের প্রাণভোমরা। কর্ণফুলীর স্রোত, নাব্যতা ও পানি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। এ নদীর প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া, নদীকে জীবন্ত রাখা দেশের সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। যেকোনো মূল্যে কর্ণফুলীকে দখলদূষণমুক্ত করে তার প্রবাহ বহমান রাখতে হবে। আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে তাঁদের আশ্বাসের জন্য ধন্যবাদ জানাই।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, জনসাধারণের অসচেতন ও বেপরোয়া ব্যবহারে দিন দিন কর্ণফুলী নদী অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। দখল ও ভরাটের করাল গ্রাসে এই নদীর মতো অনেক নদী মরে গেছে। নদী বাঁচলে জীবন বাঁচবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই নদীকে বাঁচাতে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্ণফুলীতেই চট্টগ্রাম বন্দর। দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো বিকল্প বন্দর নেই। দখলদূষণে কর্ণফুলী যদি গতিপথ হারায় তখন বন্দর বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কর্ণফুলী রক্ষায় সকল আয়োজন চট্টগ্রাম বন্দরকেই করতে হবে। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকার পরও কর্ণফুলীতে ড্রেজিং করা হয়নি। দু’পাড় এখনো দখলমুক্ত করেনি। হাই কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, নতুন করে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা।

অন্যদিকে, কর্ণফুলী নদী গবেষকরা বলছেন, কর্ণফুলী সুরক্ষায় এ মুহূর্তে দু’টি বিষয় জরুরি। এক. দূষণরোধ এবং দুই. অবৈধ দখলকৃত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ। অভিযোগ উঠেছে, কর্ণফুলী ভরাট করে ভূমির ব্যবসা চলছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জমির দাম বৃদ্ধির সুবাদে জমির ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এই অপতৎপরতাও বেড়ে গেছে। গবেষকদের অভিযোগ, কর্ণফুলীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা দিলেও সেই আদেশ লঙ্ঘন করে নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। এই নদীর সঙ্গে ২ কোটির বেশি মানুষের জীবনজীবিকা জড়িত। শহরের সকল বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। এটি জলজ বাস্তুসংস্থানের জন্য ক্ষতি। উন্নত শহরে এসব নেই। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উদ্যোগে চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, বন্দর ও জেলা প্রশাসনকে দিয়ে এই নদীকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।

চট্টগ্রামের নদী ও খাল রক্ষার জন্য আন্দোলন চলছে। বিভিন্ন ব্যানারে কর্ণফুলীকে বাঁচানোর জন্য দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, কর্ণফুলীর দুই পাড়ে যেসব বেসরকারি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। খালগুলো দিয়ে যাতে গৃহস্থালি বর্জ্য, পলিথিন নদীতে পড়তে না পারে, বেলে মাটির পাহাড় বৃষ্টিতে ক্ষয়ে যাতে নদীতে পলি জমতে না পারে সে জন্য মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিলট্রেপ তৈরি করতে হবে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে যেমন চিকিৎসা দরকার, তেমনি নদীরও শাসন, পরিচর্যা দরকার। তাই জরিপ অনুযায়ী নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে