কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি হওয়ায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি স্পিলওয়ে বা জলকপাট ছয় ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়। এ সময় প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নির্গত হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে। এছাড়া একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে আরো ৩২–৩৩ হাজার কিউসেক পানি নির্গত হচ্ছে কর্ণফুলীতে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবারও ১৬টি জলকপাট ৪ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়। এতে করে প্রতি সেকেন্ডে ৬ হাজার কিউসেক পানি নির্গত হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। হ্রদে পানির বাড়ার পর সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় ছাড়া হলো পানি। সন্ধ্যা ৭টায় হ্রদের পানির উচ্চতা ছিল ১০৮ দশমিক ৬০ এমএসএল।
প্রকৌশলীরা বলছেন, পানি ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ধাপে ধাপে পানি ছেড়ে কাপ্তাই হ্রদে রুলকার্ড অনুযায়ী পানি রাখবে কর্তৃপক্ষ। বাড়তি পানি কর্ণফুলী নদীতে ফেলে ঝুঁকিমুক্ত করা হবে। বিকালে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় আবারও পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের।
তিনি জানান, হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি যাওয়ায় সকাল ৮টায় ১৬টি স্পিলওয়ে ছয় ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়। পরে হ্রদের পানির উচ্চতা কিছুটা কমার পর দুপুর ২টায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সকাল ৮টায় ১৬টি জলকপাট খুলে দেওয়ার পর ২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদ হতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইন ও স্পিলওয়ে দিয়ে মোট প্রায় ৪০ হাজার কিউসেক পানি নির্গম হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে। তবে পানি প্রবাহ কম থাকায় কর্ণফুলী নদীর আশপাশের এলাকাগুলোতে পানি নিষ্কাশনের প্রভাব পড়েনি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে, কাপ্তাই হ্রদে বিকাল ৪টায় পানির উচ্চতা ছিল ১০৮ দশমিক ৪৮ এমএসএল।
কতটা প্রভাব পড়ল রাঙ্গুনিয়াসহ ভাটি অঞ্চলে : রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, কাপ্তাই বাঁধ খুলে দেওয়ার পর কতটা প্রভাব পড়ল রাঙ্গুনিয়াসহ ভাটি অঞ্চলে, তা দেখতে উৎসুক মানুষ নদীর পাড়ে ভিড় করে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট বন্ধ করা ছাড়া বড় কোনো প্রভাব পড়েনি কর্ণফুলী নদীতে।
চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটের সুপারভাইজার রবিজয় চাকমা জানান, পানি ছাড়ার সময় চন্দ্রঘোনা–রাইখালী এলাকায় ফেরি পারাপার বন্ধ রেখেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। দুর্ঘটনা এড়াতে এবং পানি বাড়লে পল্টুন ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নদীতে পানির গতিবেগ কমে গেলে আবার ফেরি পারাপার শুরু করা হবে বলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এদিকে ফেরি পারাপার বন্ধ থাকায় রাজস্থলী–বান্দরবান যাওয়ার যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
জানা যায়, শনিবার বিকালের পর থেকে আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসন কর্ণফুলী নদী ও শাখাখালের তীরবর্তী এবং নিচু অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছিল। এতে অনেক বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এমনকি অনেকে সরিয়ে নেন ঘরের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
সরেজমিনে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার গোডাউন ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বাড়তি পানি দেখা যায়। তবে তাতে তীরবর্তী এলাকায় কোনো প্রভাব পড়েনি। ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে জেলে সম্প্রদায়। অন্যান্য দিনের চেয়েও গতকাল বিকালে ব্রিজের উপর ছিল বাড়তি মানুষ। নদীতে পানি বেড়েছে কিনা দেখতে ভিড় করে অনেক মানুষ।
আশঙ্কা ছিল, কাপ্তাই হৃদের পানি ছাড়লে গুমাইবিলের পানি আরো বেড়ে যাবে। কিন্তু গত শনিবার বিলে চার ফুটের মতো পানি থাকলেও গতকাল অনেকটা নেমে গেছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, বাঁধ ছাড়ার কারণে গুমাইবিলে কোনো প্রভাব পড়েনি। গেল ৫ দিন কয়েক ফুট পানির নিচে থাকার পর রোববার থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে বিলে বন্যার পানি সহনশীল জাতের আমন চারার আবাদ হওয়ায় ফসল নষ্ট হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার প্রভাব আমাদের উপজেলায় নেই বললেই চলে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে আমাদের লোকজন পর্যবেক্ষণে ছিল।
প্রসঙ্গত, কাপ্তাই হ্রদে বাঁধ দেওয়া অংশে ১২ দশমিক ২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের ১৬টি জলকপাট রয়েছে। এগুলো দিয়ে একসঙ্গে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক পানি নির্গমন করতে পারে। হ্রদে সর্বোচ্চ পানি ধারণ সক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।