চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশমুখ কর্ণফুলী থানায় গত মাসের ৫ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪২ দিনে মোট মামলা হয়েছে ৫৫ টি। এর মধ্যে ৫২.৭৩ শতাংশই মাদকদ্রব্য আইনে মামলা। যা প্রায় ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে মাদকের মামলার সংখ্যা ২৯টি। মোট মামলায় আসামি গ্রেপ্তার ৪৬ জন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যদিও এরমধ্যে ছাত্র জনতার আন্দোলনে বিগত সরকারের পতন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয় থাকায় অবাধে সারাদেশে ছড়িয়েছে মাদকের বিস্তার। কারণ ছিলো না পুরো ৪৪ দিন জুড়ে কোন পুলিশী চেকপোস্ট।
কর্ণফুলী থানাটি শহরের বাহিরে হলেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীন। থানাটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান মহাসড়কে হওয়ায় সিএমপির অন্যান্য থানার তুলনায় এখানে মামলা ও জিডির সংখ্যা বেশি।
মাদক কারবার, সড়ক দূর্ঘটনা, ছিনতাই, অপহরণ, মলমপার্টি, ডাকাতি, মারামারি, বিশেষ ক্ষমতা এবং নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হচ্ছে বেশি।
আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালের এই সময়ের মধ্যে কর্ণফুলী থানায় মোট মামলা হয়েছে ৫৫ টি। এর মধ্যে শুধু মাদক সংশ্লিষ্টতায় মামলা হয়েছে ২৯ টি। এরপর চুরি ৬টি, নারী ওর শিশু নির্যাতনে আইনে ১টি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১টি, ডাকাতি ও দস্যুতা ২টি, প্রতারণা ১টি, হত্যা ২টি ও অন্যান্য যেমন-মারামারি, অজ্ঞান পার্টি, চাঁদাবাজি, সিআর এজাহারসহ অন্যান্য মামলাটি ১৩টি।
মামলার পরিসংখ্যান ও প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বলছে, কর্ণফুলী থানায় বেশির ভাগ মামলা মাদকের। ৮০ ভাগ মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হচ্ছে। ছোট্ট উপজেলা মাদকের তেমন খবরাখবর পাওয়া না গেলেও স্থানীয়রা বলছেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, ও কোস্টগার্ড যে সব অপরাধীরে মাদকসহ মহাসড়কে (কক্সবাজার-চট্টগ্রাম) অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেন। তাঁদেরকে কর্ণফুলী থানায় প্রেরণ করা হয়।’
প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন বাহিনীর আইনশৃঙ্খলার সদসরা শহরের প্রবেশপথ কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেকে অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। ফলে, মামলার জুরিডেকশন (jurisdiction) হিসেবে বিচারব্যবস্থা; আইনগত অধিকারের ব্যাপ্তি বা সীমা; অধিক্ষেত্র এলাকা হিসেবে ওই সব বাহিনীর সদস্যরাও কর্ণফুলী থানায় মামলা করে থাকেন।
ফলে, মাদকের তকমা লাগছে কর্ণফুলী উপজেলায়। যদিও মাদক কারবারি যে একদম নেই তা নয়। তবে যতটা মাদক মামলা কর্ণফুলীতে হচ্ছে, ততটা কর্ণফুলীর লোকজন ঘটাচ্ছে না বলে স্থানীয় লোকজন মত প্রকাশ করেন। তবে যুব সমাজ যে অনলাইন জুয়া, ক্যাসিনোতে ভয়াবহ আসক্ত হয়ে গেছে তাতে সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে, উপযুক্ত স্থান সঙ্কটের কারণে বিগত ২৩ বছর ধরে ভাড়া ভবনেই চলছে কর্ণফুলী থানার কার্যক্রম! ইউনিয়ন পরিষদের ভেতর থানা। আবার থানার উপরেই পরিষদ। এক থানা এলাকার ফাঁড়ি আরেক থানার ভেতর। এসব কিছুর মূলে সিএমপি কর্ণফুলী থানা পুলিশ তাঁদের নিজস্ব আবাসন ও দাপ্তরিক অফিস সঙ্কটে ভুগছেন। কর্ণফুলী থানার পরিধি বেড়েছে। কিন্তু সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। সিএমপির অন্য থানা থেকে কর্ণফুলী থানা আবার অপরাধ দমনে পিছিয়েও নেই। যদিও স্বল্প জনবল দ্বারা সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও নেই কোন পুলিশ ব্যারাক ও একত্রীভবন।
কর্ণফুলী থানার অধীনে তিনটি ফাঁড়ি-শাহমীরপুর, শিকলবাহা ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এবং তিনটি ক্যাম্প-কাফকো, কেপিইজেড ও শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুলিশ ক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে। এতে রয়েছে একটি পুলিশ বক্সও। থানায় বর্তমানে দু’জন পরিদর্শক, ১৫ জন উপ-পরিদর্শক, ২১ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক ও ২২ জন কনস্টেবল কর্মরত আছেন।
কর্ণফুলী থানায় নবাগত ওসি মোহাম্মদ মনির হোসেন যোগদান করলেও দীর্ঘদিন কর্ণফুলী থানায় ইন্সপেক্টর তদন্ত হিসেবে মেহেদী হাসান অপরাধী ডিটেকটেডে বেশ দক্ষ ছিলেন। সে হিসেবে মন্তব্য জানতে চাইলে ওসি তদন্ত মেহেদী হাসান বলেন, ‘পুলিশের জনবল সঙ্কট সব জায়গাতেই রয়েছে। আমাদের যে জনবল রয়েছে সেটি কর্ণফুলী থানার জন্য পর্যাপ্ত না। তবুও সিএমপির অন্য থানা থেকে কর্ণফুলী থানা অপরাধ দমনে পিছিয়েও নেই। যদিও স্বল্প জনবল। গতকালও বিধ্বস্ত মইজ্জ্যারটেক পুলিশ বক্সে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে একজন নারীকে গ্রেপ্তার করি।
এ প্রসঙ্গে বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘মাদকের বেশির ভাগ মামলা কর্ণফুলীতে হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, কর্ণফুলী শহরের প্রবেশমুখ। চেকপোস্ট ছিলো কর্ণফুলীতে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালে অবস্থানগত কারণে কর্ণফুলী থানাতেই মামলা রেকর্ড হয়।’