বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ সমন্বয়ক পরিচয়ে একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে। এতে সমন্বয়ক পরিচয়ে শিল্পজাত উপজেলা কর্ণফুলীর বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি ও কারখানায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল বেদখল, ব্যবসার নামে নানা চাপ প্রয়োগে নিরীহ মানুষের ব্যবসা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু ভূক্তভোগী কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোন ধরণের তথ্য বের হচ্ছে না। সম্ভবত ব্যবসার খাতিরে কেউ মুখ খুলছেন না। আবার কেউ মুখ বুঝে সহ্য করছেন। শুধু কি সমন্বয়ক! দলীয় পরিচয়েও বাড়ছে নানা ঘটনা। এসব নেতা কর্মীদের আলোচিত উক্তি, ‘বহুত দিন হাইও আর ন হাইও’। এসব ঘটনার আড়ালেও কর্ণফুলীর রাস্তাঘাটে বাড়ছে ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ, মধ্যরাতে খামারে হামলা আর হুমকির মতো নানা ঘটনা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পুরো কর্ণফুলীতে কথিত সমন্বয়কদের উৎপাতে সাধারণ মানুষেরাও অতিষ্ঠ। কেননা, গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নামে কর্ণফুলীর বিভিন্ন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, কল-কারখানা এবং স্টিল মিলসহ এক দশক প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে উঠতি বয়েসি কিছু তরুণ ছাত্র সমন্বয়ক ট্যাগ লাগিয়ে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটিয়েছেন। কিন্তু উল্টো হয়রানি বা হুমকিতে শঙ্কিত হয়ে কেউ সরাসরি মামলা বা অভিযোগ না করলেও গণমাধ্যকর্মীদের কাছে সুস্পষ্ট কিছু তথ্য আসছে।
এছাড়াও, কারখানার মালামাল লোড আনলোড ও জাহাজ থেকে স্ক্র্যাপ আনা নেওয়ার কাজেও ছাত্র পরিচয়ে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কর্ণফুলীর সমাজকর্মী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আমরা এক আজব উপজেলায় বসবাস করি। এখানে মইজ্জ্যারটেক সিএনজি স্টেশন থেকে বড় বড় মিল কারখানা নদীতেও চলে চাঁদাবাজি। আগে রাজনৈতিক নেতারা চাঁদাবাজি করতো এখন ভুয়া ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে করছে।’
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক সমন্বয়ক (চবি) বর্তমানে স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটির চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি মো. এনামুল হক বলেন, ‘কর্ণফুলী উপজেলা থেকে এ রকম অনেক অভিযোগ আসছে। সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন ঝামেলা তৈরি করতেছে। অন্যায়, চাঁদাবাজ এ গুলো যেই করুক না কেন, প্রশাসন যাতে এগুলো শক্তভাবে দমন করে। সমন্বয়ক নাম ভাঙিয়ে করুক কিংবা সমন্বয়ক চাঁদাবাজকেও কোন সুযোগ দেওয়া যাবে না।’
একই ইস্যুতে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখন প্রায় প্রতিদিন দলে দলে দর্শনার্থী আসছেন। ইউএনও স্যারকে প্রতিদিন অর্ধ শতাধিকের মতো দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। এদের বেশির ভাগ পরিচয় দেন ছাত্র-সমন্বয়ক। এতে প্রশাসনও বিরক্ত আর বিব্রত।’
কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি বা অপরাধ না করে। দলের সুনাম যেন নষ্ট না হয়।’
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘সমন্বয়ক পরিচয়ে কোন মিল কারখানা বা ফ্যাক্টরিতে চাঁদাবাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অপরদিকে, চট্টগ্রামের মূল সমন্বয়ক সূত্র জানিয়েছে, উপজেলায় তাঁদের কোনো কমিটি নেই। যারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করবে, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘সমন্বয়ক পরিচয়ে কেউ আসে না। যারা আসেন তাঁরা সকলে সাধারণ ছাত্র পরিচয়ে দেন। আর মিল-কারখানা ও ফ্যাক্টরিতে যে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে এ ধরনের কোন লিখিত অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।’