করোনায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কমেছে। যদিও রক্তের চাহিদা কমেনি। স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে কাজ করে রক্তদাতাদের সংগঠন সন্ধানী। সংগঠনটির চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাখার তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে শুধু সন্ধানীর মাধ্যমেই ৪ হাজার ১৩ জন মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন চট্টগ্রামে। কিন্তু করোনাকালীন এই সংখ্যা অন্তত এক হাজার কম। ২০২০ সালে (করোনাকালীন) এই সংগঠনের মাধ্যমে সবমিলিয়ে ৩ হাজার ৬৯ জন মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন। হিসেবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় করোনা পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছায় রক্তদান কমেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ খুলে রক্তদান কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা। সিটিজি ব্ল্লাড ব্যাংক, ব্ল্লাড ডোনার সোসাইটি, ব্ল্লাড ডোনেটিং ক্লাব, লামা ব্ল্লাড ব্যাংক, ফটিকছড়ি ব্লাড ডোনার সোসাইটিসহ আরো অনেক সংগঠন গড়ে উঠেছে আগ্রহী রক্তদাতাদের নিয়ে। শুরুতে ১২ জন নিয়ে গড়ে তোলা সিটিজি ব্লাড ব্যাংকের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২১০ জন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ইমরান ইমু। তিনিসহ আরো ১১ জন ফেসবুক গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা এডমিন।
সিটিজি ব্ল্লাড ব্যাংকের এডমিন মো. আখতার হামিদ নিজ এলাকার নামে গড়ে তুলেছেন লামা ব্ল্লাড ব্যাংক। প্রতিষ্ঠাকালীন বন্ধু ও সহপাঠী আদনান, রুবেল হাসান, আমির, সাকিব, তৌহিদ ইসলামসহ ৭/৮ জন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা এখন ৪০ জন বলে জানান আখতার হামিদ। এ সংগঠনের মাধ্যমে পার্বত্য জনপদেও স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহ সৃষ্টির কাজ করছেন এসব তরুণ। স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রমের মাধ্যমে এরইমাঝে পাহাড়ের রক্ত সেনানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তারা।
আখতার হামিদ বলেন, সিটিজি ব্ল্লাড ব্যাংক ও লামা ব্ল্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা দিনে অন্তত ৩০ জনের রক্ত ম্যানেজ করে দিয়ে থাকি। বিশেষ করে আমাদের গ্রুপের সদস্যরাই স্বেচ্ছায় রক্তদান করে থাকেন। যদিও আগের স্বাভাবিক সময়ে এই সংখ্যা আরো বেশি ছিল।
সিটিজি ব্ল্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এডমিন ইমরান ইমু বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এসেও রক্তদাতারা রক্তদান করেছেন। কিন্তু করোনাকালীন বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে রক্তদানে আগ্রহ কম দেখা গেছে। অনেকের আগ্রহ থাকলেও যাতায়াত জটিলতায় আসতে পারেননি। অনেকে আবার ঘর থেকে বের হতে চাননি। সবমিলিয়ে করোনাকালে রক্তদানে আগ্রহ কমেছে।
এদিকে, এই করোনা পরিস্থিতিতে আজ (১৪ জুন) পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ভূমিকা রাখছেন তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। এদিন বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টিনারের জন্মদিন। নোবেলজয়ী এ বিজ্ঞানী রক্তের গ্রুপ ‘এ, বি, ও, এবি’ আবিষ্কার করেছিলেন।
বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে উন্মুক্ত রক্তদান কর্মসূচির পাশাপাশি একটি মোটিভেশনাল প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে সন্ধানী চমেক শাখা। এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাদিয়া ইসলাম বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে রক্তদানে আমরা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবো। দিবসটি উপলক্ষে অনলাইনে দুটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া শুভেচ্ছা কার্ডের মাধ্যমে রক্তদাতাদের শুভেচ্ছা জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান সাদিয়া ইসলাম।
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।
প্রতিবছর সারাবিশ্বে ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়। এখনও বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের রক্তদানের ওপর। আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্ত দান করে। যদিও স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দেয়া রক্তই ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহের’ মূল ভিত্তি বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।