দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) শনাক্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকাল দেশের গণমাধ্যমগুলোতে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) খবরটি দিয়েছে। এতদিন শঙ্কা থাকলেও শনিবার শঙ্কাকে সত্যে রূপান্তরিত করে ভারতীয় ধরনটি বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ার পর দেশে স্বাভাবিকভাবেই দেখা দিয়েছে নতুন শঙ্কা। যেখানে পুরোনো ধরন মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ, সেখানে নতুন ধরন তৈরি করেছে নতুন শঙ্কা। গবেষকেরা এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি, ভাইরাসের ভারতীয় ওই ধরনটি আরও বেশি সংক্রামক কি না। এমনকি করোনার যে টিকাগুলো দেশে দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো এই ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর কি না, তাও এখনো স্পষ্ট নয়।
ভারতে শনাক্ত করোনাভাইরাসের একটি ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন এখন সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। তবে এটা এখনও জানা যায়নি যে কোভিডের এই ভ্যারিয়েন্টটি আসলে কতটা ছড়িয়ে পড়েছে, এবং ভারতে এখন সংক্রমণের যে ভয়াবহ ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ চলছে তার জন্য নতুন শনাক্ত এই করোনাভাইরাসটি কতটা দায়ী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে কোনো ভাইরাসই ক্রমাগত নিজের ভেতরে নিজেই মিউটেশন ঘটাতে করতে থাকে অর্থাৎ নিজেকে বদলাতে থাকে, এবং তার ফলে একই ভাইরাসের নানা ধরন তৈরি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে তেমন মাথাব্যথার প্রয়োজন হয় না, কারণ নতুন সৃষ্ট অনেক ভ্যারিয়েন্ট মূল ভাইরাসের চেয়ে দুর্বল এবং কম ক্ষতিকর হয়।
কিন্তু কিছু ভ্যারিয়েন্ট আবার অধিকতর ছোঁয়াচে হয়ে ওঠে – যার ফলে টিকা দিয়ে একে কাবু করা দুরূহ হয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসের ভারত ভ্যারিয়েন্ট – যেটার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭ – প্রথম ভারতে শনাক্ত হয় অক্টোবর মাসে।
এদিকে, ভারতের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দেশটির সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত বন্ধ রয়েছে। স্থলপথে ভারত থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যে নাগরিকেরা চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন এবং যাদের ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম-শুধু তারাই বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। সরকারের এ সিদ্ধান্ত খুবই প্রয়োজনীয় ছিলো।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আসলে পরিস্থিতি খারাপের আশংকা করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন করে একদল বিশ্লেষক বলছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে। তাঁরা বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশাল সীমান্ত ভারতের সাথে। তাই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ যতই বন্ধ থাকুক – তাতে সেখানকার ভাইরাস আসবে না এই নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে আমরা আগে ধারণা দিয়েছিলাম যে সেকেন্ড ওয়েভের চূড়া বা পিক আসবে মে মাসের শেষে বা জুনের দিকে। কিন্তু এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই স্বল্প মাত্রায় লকডাউনসহ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন আমাদের মডেল বলছে যে জুলাইতে আসতে পারে সেকেন্ড ওয়েভের পিক বা চূড়া। তবে স্বাস্থ্যবিধি সবাই ঠিক মতো মানলে সেটি তেমন খারাপ নাও হতে পারে’। এখানে পিক বা সর্বোচ্চ চূড়া বলতে দিনে অন্তত ১০/১২ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে বলে জানালেন বিশ্লেষকরা।
এটা নিশ্চিত যে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত বিধ্বস্ত ভারত। দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুতে দেশটি একের পর এক রেকর্ড গড়ে যাচ্ছে। এতে দৃশ্যত দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অঙিজেনের অভাবে বহু করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যেহেতু ভাইরাসের একই ধরন বাংলাদেশেও ঢুকে পড়েছে তাই শঙ্কা দেখা দিয়েছে- ভারতের মতো বাংলাদেশেও ব্যাপক প্রাণহানি ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটে কিনা। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য আমাদের জেনে রাখা দরকার এবং কিভাবে সতর্ক থাকা যায় তার ব্যবস্থাও করতে পারলে মঙ্গল।