করমুক্ত আয়সীমা ৬ লাখ টাকা করার দাবি

| বৃহস্পতিবার , ৩০ মে, ২০২৪ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

 

দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে আসন্ন বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা অন্তত ৬ লাখ টাকা করার দাবি উঠেছে। গতকাল বুধবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন’ নামে একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে এ দাবি উঠে আসে।

অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের একাংশের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অক্সফাম। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উঠবে। এরই মধ্যেই এডিপি, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাসহ বাজেটের বিভিন্ন বিষয়ের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনাসহ সামাজিক নানা বৈষম্যের শিকার নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চেয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের একাংশ বলছে, অতি দরিদ্রদের জন্য বছরে কমপক্ষে ১০০ দিনের কাজের সুযোগ রেখে নতুন বাজেট করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যারা অর্থনৈতিক নানা সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন, তারাই সব পাচ্ছেন। সত্যিকারেই যাদের পাওয়া উচিত, তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা আসলেই কি দরিদ্র মানুষের কথা ভাবছি? এসব বিষয় বাজেটে কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে, তা দেখার বিষয়।

করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৬ লাখ টাকা করার সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, তাতে নিম্ন আয়ের মানুষ এর সুবিধা নিতে পারবে। সরকার বলে, রাজস্ব আয় বাড়ছে না। অথচ রাজস্ব আদায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কর ফাঁকি দেওয়ার কারণে। যারা কোটি টাকা আয় করেন, তারা করের বাইরে থেকে যান। কর ফাঁকি রোধ করা ও অতি ধনীদের করের আওতায় আনা দরকার।

সমাজে ব্যাপকভাবে বৈষম্য বাড়ছে মন্তব্য করে সিপিডির এ গবেষণা পরিচালক বলেন, কিছু মানুষের এত আয় হচ্ছে, কীভাবে তা খরচ করবে খুঁজে পায় না। বিদেশি শিল্পী ও খেলোয়াড়দের দেশে আনা হয়, ডলারে তাদের পেমেন্ট করতে হয়। এগুলো তো বিশাল অংকের। এতে সরকারের চেয়ে বেশি জড়িত করপোরেটরা, নিজেদের স্বার্থেই এসব করে তারা।

আয় বৈষম্য কমানোর উপায় কী? মোয়াজ্জেম হোসেনের ভাষায়দেশে প্রচুর পরিমাণে বিপুল সম্পদের মালিক রয়েছেন। তাই এখন ‘অ্যাসেট ট্যাক্স’ বা ‘সম্পদ কর’ এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দরকার। সরকার যদি আয় বৈষম্য কমাতে চায়, তাহলে অনেক বেশি সম্পদের মালিকদের সম্পদে কর ধার্য করে তা থেকে গরিবের অংশ নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, গত দুইতিন বছর ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। এখন অনেকে হিমশিম খাচ্ছে। কেউ ইংল্যান্ডে বেড়াতে যেতে পারছে না, কেউ বাচ্চাটাকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছে না। এটাই হচ্ছে সমাজে মূল সমস্যা। বিষয়গুলো নতুন বাজেটে অ্যাড্রেস করা হয় কিনা, সেটা হচ্ছে বিষয়। সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে পেনশন আইন বাস্তবায়ন, সার ও কৃষি উপকরণে ভর্তুকির দেওয়ার দাবি জানিয়ে ডিবিএমের এম শহিদুল্লাহ বলেন, করমুক্ত আয়সীমা ন্যূনতম ৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা প্রয়োজন।

বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা পুরুষের ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ টাকা, নারীদের ৪ লাখ টাকা। এর থেকে ওপরের আয়ের দিকে উঠতে থাকলে তাদের করের হারও বেশি হয়।

নারীদের আয়ে করমুক্ত সীমা ৭ লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি জানিয়ে অ্যাকশন এইডের প্রতিনিধি মৌসুমি বিশ্বাস বলেন, নারীদের ঋণ প্রাপ্তিতে ঋণ সহজ করার কথা বলা হলেও ব্যাংক বা কোনো সংস্থা তাদের ঋণ দিতেই চায় না। তারপর তার স্বামী বা পিতার আয়ের উৎস জানতে চায়। নারী যদি বলে সে নিজে ব্যবসা করবে, তাহলে তার ঋণ পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইরান সাত দিনের মধ্যে বোমা তৈরির ইউরেনিয়াম উৎপাদনে সক্ষম
পরবর্তী নিবন্ধসিএমএসএমই অর্থায়নে দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা