উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, আগের মতোই সাড়ে তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত থাকছে। করমুক্ত সীমা পেরোলেই যেকোনো এলাকার করদাতাকে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হবে। তবে নতুন করদাতার জন্য এই পরিমাণ এক হাজার টাকা ঠিক করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে বাজেট বক্তব্যে এমনটি জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, ২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ করবর্ষের জন্য স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। গেজেটভুক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪–এ আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’ করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খবর বাংলানিউজের।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যক্তি ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবার করদাতাদের জন্য ২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ করবর্ষে মোট আয় করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করলে ন্যূনতম করের পরিমাণ এলাকা নির্বিশেষে পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন করদাতাদের ন্যূনতম করের পরিমাণ এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার পাঁচ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার চার হাজার টাকা। সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতাকে ন্যূনতম কর হিসেবে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। এখন যেকোনো এলাকার করদাতার জন্য সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা আয়করের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, কর পরিপালন সহজ করার জন্য লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ কর হার সুবিধা প্রাপ্তির শর্ত শিথিল করে আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগ এর পরিবর্তে কেবল সকল প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া, পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৬–২৭ এবং ২০২৭–২৮ করবর্ষের জন্য সম্পদ সারচার্জের বিদ্যমান হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম কর–কে সারচার্জ পরিগণনার ভিত্তি না রেখে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করযোগ্য আয়ের ওপর নিয়মিত করহার প্রয়োগ করে নিরূপিত করের ওপর সম্পদ সারচার্জ পরিগণনা করার বিধান করা হয়েছে।
কর পরিপালন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– ন্যূনতম করের কারণে কোনো করদাতাকে নিয়মিত করের যে পরিমাণ অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হয় তা পরবর্তী করবর্ষসমূহে সমন্বয় করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির ‘কৃষি হইতে আয়’ অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে; বেসরকারি চাকরিজীবীদের করযোগ্য আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাদযোগ্য অংকের পরিমাণ সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে।
চাকরিরত কর্মচারীদের কিডনি, লিভার, ক্যানসার, হার্ট এর চিকিৎসার পাশাপাশি মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার ও কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ করমুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয় এবং জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সর্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে প্রাপ্ত সুবিধাভোগীর কোনো আয় এবং জিরো কুপন ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেট থেকে উদ্ভূত আয় করমুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।