কয়েকদিনেই ভরাট হয়ে যায় চাক্তাই খালের মুখ

শহরের ময়লা গিয়ে পড়ে কর্ণফুলীতে, চিন্তায় বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন ড্রেজার দিয়ে সরাচ্ছে বর্জ্য

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

শহরের ময়লা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন হলেও শহরের ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে নদী। বিশেষ করে চাক্তাই খালের মুখের ময়লা সরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধুমাত্র খালের মুখের নদী ভরাট ঠেকাতে একটা ড্রেজার মোতায়েন করতে হয়েছে। বিপুল ব্যয়ে খাল সচল রাখার তৎপরতার মাঝেও ভাটার সময় খালের তলা দেখা যাচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, শহর থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পলিথিনসহ নানা বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত এলাকায় ৮টি খাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ও আবর্জনা কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। শহরের এই বর্জ্য শুধু কর্ণফুলী ভরাটই নয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বড় ধরণের হ্যাডেক হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ টন পলিথিনসহ বিপুল পরিমাণ ময়লা আবর্জনা অপসারণের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীতে বহুল প্রত্যাশার ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছ। ২০১১ সালে মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এন্ড ড্রেজিং কর্পোরেশন নামের কোম্পানির মাধ্যমে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প শুরু করা হলেও মাঝপথে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ডিপিএম পদ্ধতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে চীনের বিশ্বখ্যাত কোম্পানি চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে দিয়ে নতুন করে ড্রেজিং কাজ শুরু করা হয়।

সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ নামের এই প্রকল্পের আওতায় নদী থেকে ৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলন করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৩শ’ কোটিরও বেশি টাকা। প্রকল্পের আওতায় সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার চওড়া এলাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গত নভেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ড্রেজিং এর সুফল ধরে রাখার জন্য বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালানো হচ্ছে। ড্রেজিং পরবর্তী তিন বছরের রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।

কিন্তু এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চালাতে গিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাথার ঘাম পায়ে পড়ার উপক্রম হচ্ছে। শহর থেকে বিপুল পরিমান ময়লা আবর্জনা নিয়মিত নদীতে গিয়ে পড়ায় চাক্তাই খালের মুখে নতুন করে ভরাট হতে শুরু করেছে। ভরাটের মাত্রা এত তীব্র যে মাত্র কয়েকদিনেই খালের মুখ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই মাটি সরানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে নতুন করে একটি ড্রেজার লাগাতে হয়েছে। ড্রেজার প্রতিদিন যে পরিমান ময়লা সরাচ্ছে তার থেকে বহু বেশি ময়লা শহর থেকে খাল হয়ে নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে করে ভরাটের দাপট ঠেকানো কঠিন হয়ে উঠছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। চ্যানেলের নাব্যতা বেড়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় তিন বছর নদী রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। এখন সেই কার্যক্রম চলছে। চাক্তাই খালসহ অন্যান্য খাল দিয়ে শহরের প্রচুর ময়লা নদীতে পড়ছে। এর ফলে আমাদেরকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। নদীর ওই এলাকার ময়লা এবং ভরাট ঠেকাতে একটি ড্রেজার মোতায়ন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফৌজদারহাটে ট্রেনের দুটি ইঞ্জিনের সংঘর্ষ
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ মিনার দৃশ্যমানে ১০ দফা সুপারিশ