কম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে

চট্টগ্রামে ধর্ম উপদেষ্টা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর প্রবারণায় দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

খুব কম সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, জনগণ যেন তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা আমরা করব। ভোটিং সিস্টেম এবং এর কালচারটা আমাদের সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমরা ভোটার লিস্ট হালনাগাদ করে নির্বাচন কমিশনকে সাজিয়ে একটা ফেয়ার ফ্রি নির্বাচন দিব। আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। যারা জনগণের ম্যান্ডেট পাবে, নির্বাচিত হবে আমরা তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নিব।

তিনি গতকাল সোমবার নগরের কাজীর দেউড়ি সংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে বৌদ্ধ ধর্মীয় ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থাবিরের শততম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি আয়োজিত অষ্টপরিস্কারসহ সংঘদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, পাহাড় অশান্তিতে থাকলে সমতল শান্তিতে থাকতে পারে না। তাই পাহাড়ে ও সমতলে শান্তি ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করব।

ধর্ম উপদেষ্টা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভ প্রবারণা ও কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান করব। জেলা প্রশাসক ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। কোথাও কোনো আশংকা থাকলে মুহূর্তের মধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াবে তারা। আপনারা এই দেশের নাগরিক, আপনাদের অধিকার আছে। আপনারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন।

এসময় কিছু দুর্বৃত্ত বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় বলে মন্তব্য করেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় তারা সব ধর্মের লোকদের মধ্যে আছে। বাস্তবে এদের কোনো ধর্ম নেই। এরা ক্রিমিনাল। তারা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উপাসনালয়ে হামলা চালায়, আঘাত করে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রত্যেককে সোচ্চার হতে হবে। যাতে তারা আমাদের সম্প্রীতি ও লালিত ঐতিহ্যকে ধ্বংস কতে পারে। এদের সংখ্যা কম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আবহমানকাল ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্য লালন করে আসছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা আছে, এরকম পৃথিবীর সব দেশেই আছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারত, মিয়ানমারসহ পৃথিবীর সব দেশে সমস্যা আছে।

তিনি বলেন, আমরা সবাই এদশের নাগরিক। সবাই একসাথে পড়ালেখা করি, একসাথে চাকরি করি, ব্যবসাবাণিজ্য ও রাজনীতি করি। ধর্ম চর্চা, ধর্ম অনুশীলন, ধর্ম প্রচার করার অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। সংঘাত, হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা মানুষকে ছোট করে, মানুষকে মহৎ করে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মন বড় করতে হবে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি আগামীতে সুন্দর ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই তাহলে একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যেতে হবে। বিভেদ আমাদের ধ্বংস করে দেবে এবং সংঘাত পিছিয়ে দেবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ সাজানো বাগানের মত। বাগানে নানা ধরনের বর্ণিল পুষ্পরাজি থাকে। কিছুর গন্ধ থাকে, কিছু গন্ধবিহীন এবং কিছু দৃষ্টিনন্দন। এটাই বাগানের বৈচিত্র্য। বাগানের মত আমাদের বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নৃতাত্তিক জাতিগোষ্ঠী আছে। এটাকে আমাদের চর্চা করতে হবে। না হলে বাগানে ফুল ফুটবে না। বাগানের গাছ মারা যাবে। পারষ্পরিক সম্প্রতি, ঐতিহ্য, সৌহার্দ্য লালন করতে হবে।

তিনি বলেন, ভারতের মোগল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মো. বাবর ‘দ্যা অটোবায়োগ্রাফি অব বাবর’ নামে একটি বই লিখেছেন। ড. এনামুল হক এটার বাংলা অনুবাদ করেছেন। সেখানে তিনি চমৎকার কথা বলেছেন, ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের মানুষের অন্তর ছোট হয়। নিজেদের ছাড়া আমাদের অন্তরে অন্যদের জায়গা করার মত স্থান নেই। ফুলের প্রতি আমাদের আকর্ষণ নেই। আবিষ্কারের প্রতি আমাদের নেশা নেই। ভাই, বোন, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ দেবর সবাইকে নিয়ে এক পাতিলে রান্না করে খেলে কি অনাবিল আনন্দ হয় তা ভারতের জনগণ জানে না। তিনি বলেন, ভারতের বুদ্ধগয়ায় তীর্থযাত্রায় টুরিস্ট ভিসা বন্ধ রয়েছে। আপনারা ওখানে যেতে চাচ্ছেন। এটা ভারতের পলিসি, তারা বন্ধ রেখেছে। তবে গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে আমি আমার মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ধর্ম উপদেষ্টা হিসেবে ভারতীয় হাইকমিশনারকে অনুরোধ করব, অন্ততপক্ষে যে সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভারতের বুদ্ধগয়ায় তীর্থচর্চায় যেতে চায় তাদের জন্য স্পেশাল ভিসার ব্যবস্থা করেন।

তিনি বলেন, আপনারা প্রবারণায় ছুটির কথা বলেছেন। উপদেষ্টা হিসেবে এটা আমি পারি না। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা লাগবে। আপনারা একটা টিম গঠন করেন, আমি আপনাদের পক্ষে সুপারিশ করব।

উপসংঘরাজ শাসনপ্রিয় মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি অজিত রঞ্জন বড়ুয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন আদর্শ কুমার বড়ুয়া ও অনুষ্ঠান উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সত্যপ্রিয় বড়ুয়া। সঞ্চালনা করেন তুষার কান্তি বড়ুয়া ও ববি বড়ুয়া। উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক বোরহান উদ্দীন মো. আবু আহসান, প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতির সমৃদ্ধিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব তুলে ধরে অর্থনীতির নোবেল
পরবর্তী নিবন্ধসামাজিক জীবনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে চাই সচেতনতা