কবিতায় মুগ্ধ পাঠক, কবির আনন্দ

মোরশেদ তালুকদার | শুক্রবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

কবিতা; শব্দের কারুকার্য। ‘মানুষের বিস্ময়, স্মৃতি, স্বপ্ন, কল্পনার এক অপরূপ মিশ্রণে কবিতার সৃষ্টি’। কবিতায় ‘সর্বোত্তম ভাবের সর্বোত্তম শব্দের সর্বোত্তম প্রকাশ’ ঘটে। কবি কোলরিজের মতে সর্বোৎকৃষ্ট শব্দ সর্বোৎকৃষ্টভাবে সাজানো হয় কবিতায়। শব্দের এ বুননে মুগ্ধ হন পাঠক। ‘বুকের রক্তকে কালিতে রূপান্তর’ করে জন্ম দেয়া কবিতা পাঠকের হাতে পৌঁছুলে আনন্দ পান কবিও। অতঃপর পাঠকের মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায় কবির হৃদয়ও।

প্রতিবছর কবিকে তার পাঠকের হাতে সাহিত্যের ‘মায়াবী সন্তান’ কবিতা তুলে দেয়ার মোক্ষম সুযোগ এনে দেয় বইমেলা। একইভাবে পাঠককে তার প্রিয় কবির নতুন সৃষ্টিতে মগ্ন হওয়ারও সুযোগ করে দেয় এ মেলা। নগরের সিআরবি শিরীষতলায় চলছে বইমেলা। এ মেলাকে ঘিরেও বেরিয়েছে প্রচুর কাব্যগ্রন্থ। মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এবার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো।

এবার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘দোঁহার কবি’ ইউসুফ মুহম্মদ এর ত্রয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘শূন্যসূত্র’। এ কাব্যগ্রন্থে ‘একজন কবিবার্ণিকের আশ্চর্য প্রশ্নবোধক জিজ্ঞাসার বাণী আছেআমাদের জন্য, পাঠক ও বিশ্বমানবের জন্যকেউ জেগে আছো? শব্দ করছো না কেন?’

আঙ্গিক ও নিজস্ব দ্যোতনায় সমকালীন কাব্যসৌধের অন্যতম নির্মাতা হিসেবে যার নাম নিজ বাসভূমের সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বহুদূর তিনি কবি আবু তাহের মুহাম্মদ। বেরিয়েছে তার কাব্যগ্রন্থ ‘মক্তবের পাঠগেলা ভোরেরা’।

এছাড়া এবার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে মামুরা মমতাজ দীপার ‘মুগ্ধতার আড়ালে’ এবং শারুদ নিজামের ‘ধুলোমাখা ক্যানভাসে’। মুগ্ধতার আড়ালের ফ্ল্যাপে লেখা হয়, মামুরা মমতাজ দীপার কবিতায় জাগতিক জীবন, প্রেমপ্রতারণার সাথে যুগযন্ত্রণার স্বরটিও প্রকট। নারীমুক্তি, ধর্মের নামে অধর্ম, অপরাজনীতি এসব ভাবনাদৃশ্য শব্দেবাক্যে তাকে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করে।’

এবার বইমেলা উপলক্ষে প্রচুর কবিতার বই বেরুলেও কাব্যগ্রন্থ বিক্রি গল্প, উপন্যাসের চেয়ে কম বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। প্রকাশনা সংস্থা পেন্সিল এর বিক্রয়কর্মী আজাদীকে বলেন, গল্প, উপন্যাস বেশি চলে। কবিতার বই কম চলে। চন্দ্রবিন্দু এর প্রতিনিধি এর জুঁই বলেন, ১৭টা কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে এবার। তবে কবিতার বই কম বিক্রি হয়।

নয়ন নামে এক কবিতাপ্রেমী বলেন, কবিতা বুঝার ক্ষমতা সবার নেই। যারা বুঝেন এবং যারা কবিতার রস একবার আস্বাদন করেছেন তারা বারবার কবিতা পড়েন। মেলা থেকে তিনটি কবিতার বই কিনেছেন বলে জানান তিনি।

নতুন বইয়ের খবর :

এবার প্রকাশিত নতুন কবিতার বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেরাশেদ রউফের ‘আমি সূর্যতুমি সূর্যমুখী’ ও ‘আয়রে আমার রূপালি রূপকথা’ (কিশোর কাব্য), অভীক ওসমানের ‘নির্বাচিত পদ্য’, ওমর কায়সারের ‘লাচুংয়ের রাত’, সোহেল ইয়াসিনের ‘একটু দাঁড়াও রহস্য বাড়ছে’ বনশ্রীয় বড়ুয়ার ‘আর্য সত্য‘ ও ‘হে দুঃখের অতিথি’, মোহাম্মদ জাভেদ হোসেন ও সাদিয়া আফরিনের যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘শেষটাতেও দাঁড়িয়ে তুমি’, মাইছুরা ইশফাতের ‘বেহেমিয়ান মন’, জাহাঙ্গীর আজাদের ‘যে যৌবন শঙ্খিনীর’, খুরশিদ আনোয়ারের ‘প্রেম শহরের পথে’, হেলাল চৌধুরীর ‘নোঙ্গরে মাটির দাগ’, মাহবুবা চৌধুরীর ‘চলো বেলাবেলি ফিরে যায়’, পুষ্পিতা সেনের ‘ছুঁয়ে থেকো অনুভবে’, আবুল কালাম বেলালের ‘নির্বাচিত কিশোর কবিতা’, লিপি বড়ুয়ার ‘আমার দিগন্তজুড়ে তোমার সীমানা’, সোহেল ইয়াসিনের ‘একটু দাঁড়াও রহস্য বাড়ছে’, রোকসানা আফরীনের ‘পাগলের ঈশ্বর’, সালেহীন শিপ্রার ‘রণদৌড়ের ঘোড়া’, আবু নঈম মাহতাব মোর্শেদের ‘অরণ্যের গান’, চঞ্চল মণ্ডলের ‘অন্য রোদের নিমন্ত্রণ, আইউব সৈয়দের ‘কখনো ছন্দ কখনো দ্বন্দ্ব’, পুষ্পিতা সেনের ‘আঁচড়খানি বৃথা’, সৌমিত্র প্রিয় বড়ুয়ার ‘বিস্মৃত দিনের নকশা’, মাহবুব তরুণের ‘বিবিধ বৃষ্টিপাত’, সালমা রহমানের ‘নোনা জলের অনুভূতি’, কামরুন ঋজুর ‘অনুরাগের নূপুর’, ফাগুন মল্লিকের ‘সে অনেক কথা, প্রিয় হাসিমুখ’, শাহিদ হাসানের ‘সময়ের রোদে ভেড়া শাহ’, ঈভ নেসা জান্নাতের ‘অরণ্যে হাঁটছে জলের বাতি’, আকেল হায়দারের ‘রুয়েলিয়া’, জান্নাতুন নুর দিশার ‘হাঁটছি সাথে তিনটি চাবি’ সাইফুন্নেছা ঝুমুরের ‘আঁখি কোণে জল’, মানস কুমার বড়ুয়ার ‘খুঁজি তোমায় গোধূলি আভায়’, শারুদ নিজামের ‘শেষ প্রহরের আলিঙ্গন’ ও ‘নিঃশব্দ চোখে’, মোহাম্মদ শরীফের ‘সমুদ্রের কাছে যাবো’, হৃদয় হাসান বাবুর ‘নিষিদ্ধ প্রেম’, আবদুল্লাহ আল জিওয়ানের ‘জোছনার চাদরে প্রেমের ক্ষুধা’, শামসুদ্দিন মাহমুদ রুমির ‘জীবনের খেরোখাতা’ মালেক মুস্তাকিমের ‘সেলাই করা হাওয়ার গান’, চুননু জামানের ‘হৃদি পটে লাগে দোলা’, নিলুফা ইয়াসমিন জয়িতার ‘ভালোবাসার অজুহাত’, সৈয়দা করিমুননেসার ‘শব্দে আঁকি’, আব্দুল মান্নান শিকদারের ‘ভাবনা তোমাকে দিলাম’, রুহ রুহেলের ‘কালের রৌদ্র কফিন’, মোহাম্মদ আনোয়ারের ‘কাব্য বা কাব্য নয়’, শাহনাজ সিঁথির ‘মেয়াদোত্তীর্ণ মোহ’, সীমান্ত হেলালের ‘অনুভূতির ঘোর’, নাফিক আবদুল্লাহর ‘কবিদের কথা বলছি’ আদনান আলীর ‘অহেতুক আলবালে জলসেচনে ক্ষতি নাই’।

এর মধ্যে ওমর কায়সারের ‘লাচুংয়ের রাত’ যেন কাব্যের ছন্দে নিটোল এক ভ্রমণ কাহিনী আবার জীবনের নানা টুকরো ছবির এক কোলাজ। শব্দের বরফকুচি সরিয়ে পাঠককে এই কাব্যের জগতে প্রবেশ করতে হবে। কবিতার এক গিরিসংকুল পথ দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। যেখানে বরফের ওপর জমাট বেঁধে আছে কতকালের কথার ফুলেরা। যেখানে শত নদী স্তব্ধ হয়ে আছে কেবল পাঠকের আলতো স্পর্শের অপেক্ষায়।’

নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উৎসব :

গতকাল বইমেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উৎসব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক নৃগোষ্ঠী গবেষক ড. আজাদ বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন কবি ও নাট্যজন শিশির দত্ত, মাটিরাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ প্রশান্ত ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ চাকমা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধট্রান্সকম গ্রুপের ৫ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার