কবর দেওয়ার আগ মুহূর্তে ‘মৃত’ নবজাতকের কান্নার শব্দ

পরে হাসপাতালে মৃত্যু । মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ পিতার, চিকিৎসকের অস্বীকার

মীরসরাই প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৪ জুন, ২০২৪ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে পরীক্ষানিরীক্ষা করে বাচ্চা ‘বেঁচে নেই’ বলে জানালেন চিকিৎসক। পরে ডেলিভারি করানো হলো। নবজাতকটিকে ‘মৃত ঘোষণা’ করে দেওয়া হলো তার পিতাকে। কার্টনে করে সেই নবজাতককে নেয়া হলো কবর দেওয়ার জন্য। আর কবর দেওয়ার আগ মুহূর্তে পাওয়া গেল বাচ্চার কান্নার শব্দ। পরে হাসপাতালে নেয়া হলেও বাচ্চাটিকে আর বাঁচানো যায়নি। নবজাতকের বাবা মীরসরাইয়ের মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মীর হোসেনের ছেলে ইউনুস আলী। তিনি এই অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুলের কারণেই তার নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইউনুস আলী জানান, তার স্ত্রীর পেটে ব্যথা অনুভব ও রক্তক্ষরণ শুরু হলে শনিবার সকালে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। এটি একটি প্রাইভেট হাসপাতাল। সেখানে দায়িত্বরত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিন আয়েশা পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানান, বাচ্চা ভালো আছে। রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর দুর্বলতা কাটাতে গ্লুকোজ স্যালাইন দেন তিনি। এরপর তার পেট ব্যথা আরও বেড়ে যায়। বিকেলে পুনরায় আলট্রা করার পর চিকিৎসক জানান, বাচ্চা মারা গেছে। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করে সেই বাচ্চা ভূমিষ্ট করানো হয়। বাচ্চা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে কার্টনের ব্যবস্থা করতে বলেন তারা। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়। পরে ৯টার দিকে কার্টনে করে বাচ্চাকে দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এর মধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে।

ইউনুস আলী বলেন, যেহেতু বাচ্চাটি মায়ের পেটে মাত্র ৫ মাস ১৯ দিন ছিল, বাড়ির সবাই কার্টন খুলতে নিষেধ করে। পরে কবর দেওয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে ফোন করলে তারা বলেন, পাটিতে রাখেন বাচ্চা মারা যাবে। তখন আমি তাদের বকাঝকা করে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে উপস্থিত লোকজন আমার বাচ্চা জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে বাচ্চাকে ভর্তি করাই। সেখানে রোববার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাচ্চাটি মারা যায়। বাচ্চার মৃত্যুর জন্য ইউনুস আলী ‘ডাক্তার শারমিন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল দায়ী’ বলে অভিযোগ করেন। বলেন, জন্মের পর যদি ঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া হতো তাহলে হয়তো আমার বাচ্চা বেঁচে যেত। তারা আমার জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কার্টনে প্যাকেট করতে বলেছে। আমি এর বিচার চাই।

চিকিৎসক ডা. শারমিন আয়েশা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, আমি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখি প্রসূতির জরায়ুমুখ খুলে বাচ্চা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। তখন ইনজেকশন দিয়ে জরায়ুমুখ বন্ধ এবং ব্যথা কমানোর চেষ্টা করি। সাধারণত গর্ভধারণের ২৮ সপ্তাহ হলেও বাচ্চা ডেলিভারি করা সম্ভব হয়। এখানে মাত্র ২২ সপ্তাহ। পরিবারের সাথে কথা বলেই গর্ভপাত করানো হয়। স্বাভাবিক গর্ভপাতের পর বাচ্চাটি দুই হাত, দুই পা নড়াচড়া করে। এরপর প্রায় ২০ মিনিট আমার অবজারভেশনে রাখা হয়। পরে এটিকে একটি কার্টনে রাখা হয়। আমরা তাদেরকে কোনো ডেথ সার্টিফিকেট দিইন। কবরস্থ করতেও বলিনি।

এই বিষয়ে হাসপাতালের হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডা. শারমিনের স্বামী মো. মাসুদ বলেন, শিশুর মা বাড়িতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে যখন হাসপাতালে আসে তখন ব্লিডিং হচ্ছিল। এরপরও শিশুটিকে আমরা কোথাও নিয়ে যেতে বলিনি। জীবিত/মৃত কোনো ছাড়পত্র প্রদান করিনি। ওরা আমাদের না বলেই শিশুকে নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। উক্ত ঘটনা নিয়ে কেউ আমাদের কাছে বিচার বা অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ নিয়ে এলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধথানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ পাঠানো হলো দুদকে
পরবর্তী নিবন্ধবেনজীর দুদকে হাজির হচ্ছেন নাকি সময় নিচ্ছেন, দেখার বিষয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী