কবরস্থান ও রাস্তা কেটে সোনাইছড়িখাল পুনঃখননের অভিযোগে উত্তেজনা ও হাতাহাতি

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৭ মে, ২০২৪ at ১২:৩৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নে সোনাইছড়িখাল পুনঃ খননকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েক দফা হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।

এলাকাবাসীর দাবি-খালটি সরকারি সিট অনুযায়ী পুনঃখনন করার। এলাকাবাসীর দাবি না মেনে বাংলাদেশ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এলাকার কবরস্থান ও রাস্তা কেটে খালটি পুনঃখননের চেষ্টা করছে। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে।

এই ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত দরখাস্ত দিয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেশি লাভবান হওয়ার জন্য সরকারী সিট অনুযায়ী খালটি পুনঃখনন না করে তাঁদের ইচ্ছেমত খনন করছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২৪ অর্থ বছরে ‘চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় সোনাইছড়ি খালের ২ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজের বরাদ্দ ২৪ লাখ টাকা। খননের পর খালের প্রস্থ হবে ২৬ ফুট আর গভীরতা ১০ ফুট। কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জেলা প্রশাসক বরাবরে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার অন্তর্গত বড়হাতিয়া মৌজাস্থ ৬ নং সিটের আর.এস. দাগ নং- ৭২৮৮, বি.এস. দাগ নং- ৩৫৭৯৬, ৩৫৭৫৩, ৩৫৭৯৭, ৩৫৭৯৮ দাগাদীর আন্দর টিলা শ্রেণির জায়গাটি বিগত প্রায় ১০০ বৎসর পূর্বে হইতে অত্র এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের কবরস্থান।

কবরস্থানটিতে এলাকার হাজার হাজার পূর্বপুরুষ ও মুরব্বিগণ শায়িত আছেন। স্থানীয় একটি চক্র নানা কৌশলে খালটিকে কবরস্থানের দিকে প্রবাহিত করে দেয়। এতে কবরস্থানের বিশাল জায়গা খালের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন খালটি পুনঃখননের মাধ্যমে আবারও কবরস্থানের ওপর দিয়ে পুনঃখনন করলে আরও কবর ও কবরস্থানের জায়গা খালে বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ৫ মে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়। ইউএনও স্থানীয় চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বড়ুয়াকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেননি বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আহমদ কবির জানান, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা একটি পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের লেনদেন করে সরকারী সিট অনুযায়ী খালটি পুনঃখনন না করে কবরস্থানের ওপর দিয়ে করার চেষ্টা করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। একারণে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ইউনিটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. ইকবাল হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমিও একজন মুসলমান, কবরস্থানের বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই আমি জেনে শুনে কবরস্থান কেটে ফেলতে চাইনা। খননকাজ শুরু হওয়ার পর কবরস্থানের বিষয়ে এলাকাবাসী বাঁধা দিলে আমরা আপাতত কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ইতিমধ্যে খননকাজে ব্যাবহৃত স্কেভেটর নিয়ে আসা হয়েছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়ার পর আমরা আবার কাজ শুরু করব।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বারবার আবেদন করলেতো সমস্যার সমাধান হবেনা। এটা এলাকাবাসী, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ভূমি অফিস ৩ পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ও আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে।

বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি, পাশাপাশি কানুনগো এবং তহশিলদারকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে জায়গা পরিমাপ করে চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধান করতে নির্দেশনা দিয়েছি। এতেও সমাধান নাহলে সমাধানকল্পে যা যা করতে হয় আমি করব। প্রয়োজনে ৩ পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে আমি সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, চট্টগ্রামের ২ যুবকসহ নিহত ৫
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে খাল থেকে ২ জেলের মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা