কন্টেনার শিপ হ্যান্ডলিংসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের রোল মডেল হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। বিশ্বের শিপিং সেক্টর যখন জাহাজজট ও কন্টেনারজটে নাকাল, তখন চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ জাহাজ অপেক্ষা ছাড়াই বার্থিং পাচ্ছে। গত আগস্ট থেকে শুরু হওয়া কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর এই প্রত্যাশিত ধারা গত মাসেও অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিশ্বের শিপিং সেক্টর ভয়াবহ রকমের জাহাজজট এবং কন্টেনারজটে এক নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সিংগাপুর, কলম্বো কিংবা সাংহাইর মতো বন্দরগুলোতে চলছে ভয়াবহ রকমের জট। ট্রান্সশিপমেন্ট এসব পোর্টের জটের কারণে বিশ্বের শিপিং বাণিজ্যে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও ভয়াবহ রকমের জট চলছিল বছরের শুরু থেকে। গত জুলাই মাসেও একটি কন্টেনার জাহাজ বহির্নোঙরে পৌঁছে বহির্নোঙরে ৩ থেকে ৫দিন অপেক্ষা করতে হতো। জাহাজ ও কন্টেনার জট নিয়ে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠায় থাকতেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় দৃশ্যপট পাল্টে যায়। জাহাজ ও কন্টেনারজট সামাল দেয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ মনিটরিং জোরদারসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেন মাঠ পর্যায়ে। বেসরকারি আইসিডিতে পণ্য প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব পদক্ষেপের ফলে জাহাজ ও কন্টেনারজট নিরসন হয় বন্দরে।
বিদেশি বন্দর থেকে আসার পর অপেক্ষা না করে জেটিতে বার্থিং নেয়ার সুযোগ বিশ্বের বহু বন্দরে নেই। এ ধরনের সুবিধা বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। সূত্র বলেছে, গত চার মাসে বন্দরে আসা জাহাজগুলোর মধ্যে গড়ে ৪০ শতাংশ জাহাজ সরাসরি বার্থিং নিয়েছে। গত আগস্টে মাত্র একদিন অপেক্ষা করে জেটিতে ভিড়তে পেরেছে প্রায় ৪০ শতাংশ জাহাজ। সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ছিল সাড়ে ৩২ শতাংশ। অক্টোবরে এ সংখ্যা ছিল ৩৯ শতাংশ, নভেম্বরে এ সংখ্যা ৪০ শতাংশ।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র দু’দিন অপেক্ষার পর গত আগস্টে জাহাজ ভিড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে প্রায় ২৩ শতাংশ। অক্টোবরে সাড়ে ১৮ শতাংশ এবং নভেম্বরে ২০ শতাংশের কাছাকাছি। আর তিনদিন অপেক্ষার পর আগস্টে জাহাজ ভিড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ভিড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। অক্টোবরে ভিড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ, নভেম্বরে ৬ শতাংশ। উক্ত ধারা ডিসেম্বরেও অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমান কোন কন্টেনার জাহাজ ছিল না। নভেম্বরে বন্দরে আমদানি-রপ্তানিও স্বাভাবিক সময়ের মতো গতিশীল হয়েছে। এ মাসে বন্দরে আমদানি পণ্যবোঝাই হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৮৪ টিইইউএস। রপ্তানি পণ্যবোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৬৮ হাজার ৩৭ টিইইউএস। আমদানি খাতে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয় ২ হাজার ২২২ টিইইউএস এবং রপ্তানিখাতে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং ৫৩ হাজার ২২৩ টিইইউস।
সূত্র বলেছে, সবকিছুর মুলে রয়েছে সমন্বয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ বন্দরে গতিশীলতা এসেছে। অফডকে পণ্য ডেলিভারি বাড়ানো, বন্দর থেকে পণ্য ছাড় দ্রুততর করা, কন্টেনার জাহাজের চাহিদা অনুযায়ী কোটা বাড়ানো-কমানোসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিশ্বের শিপিং সেক্টরে বন্দর রোল মডেল হয়ে উঠছে। চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।