করোনায় মৃত্যুহার আগের তুলনায় কমলেও চট্টগ্রামে সংক্রমনের হার বাড়ছে। সাধারণ মানুষের অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যাচ্ছেন না। নিজেদের মতো করে নিজেরাই ঘরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আসন্ন শীতে করোনা সংক্রমণ আরো বাড়ার আশংকা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের ভয় না পাবার ব্যাপারটাকে বড় শংকা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এমন শংকার মাঝেও চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ বিশ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ হার আগের তুলনায় বাড়ছে বলে উল্লেখ করে গতকাল জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বি দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেছেন, সংক্রমণের হার আগের তুলনায় এক থেকে দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য তিনি মৃত্যুহার কমেছে বলে উল্লেখ করে বলেন, আগে এটা ২ দশমিক ৮ পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। সেটা কমে বর্তমানে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশে রয়েছে। মৃত্যুহার কমলেও স্বস্তি পাওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে সিভিল সার্জন বলেন, সংক্রমণের হার বাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ার শংকা তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনা চিকিৎসায় আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হলে আমরা সকলকে চিকিৎসা দিতে পারবো। চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে ৬৫০টি সিট রয়েছে। অর্থাৎ একই সাথে ৬৫০ জন রোগীকে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিতে পারবো। এই সংখ্যা যদি এক হাজারে গিয়ে ঠেকে তাহলে আমাদেরকে সংকটে পড়তে হবে। চট্টগ্রামে সরকারি ৩০টি এবং বেসরকারি ৫০টি মিলে সর্বমোট ৮০টি আইসিইউ কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে। গতকাল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ বেড এবং আইসিইউ মিলে ৬০ শতাংশ খালি ছিল বলেও সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।
করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়তে হয়েছিল অঙিজেন সরবরাহকে ঘিরে। ওই অবস্থা থেকে চট্টগ্রাম বেরিয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত অঙিজেন সরবরাহের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অঙিজেন প্ল্যান্ট, হাইফ্লো অঙিজেন ন্যাজুলার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সিলিন্ডার রয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে, আমরা প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কতজনের চিকিৎসা আমরা করাতে পারবো তা বিবেচনা করতে হবে। শত শত মানুষ যদি সংক্রমিত হতে থাকেন তাহলে আমাদের এই প্রস্তুতি কতটুকু কাজে লাগবে তা সময়ই বলতে পারবে। তিনি সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি এখনো স্বস্তির নয়। সচেতনতাই আমাদেরকে বড় ধরনের সংকট থেকে রক্ষা করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতাল কিংবা আইসোলেশন সেন্টার বন্ধ হলেও হাসপাতালগুলোতে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে বহু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। মারাও যাচ্ছেন অনেকেই। সংক্রমন না থামলেও মানুষকে সচেতন করার প্রক্রিয়া থেমে গেছে বলে উল্লেখ করে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তুতি কতটুকু রয়েছে সেটি বড় কথা নয়। পৃথিবীর বহু দেশেই করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা প্রথম ধাক্কার চেয়ে শক্তিশালী হয়ে দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সে একই দিনে চল্লিশ হাজারের মতো মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। ওখানের সিকিভাগ ধাক্কাও যদি চট্টগ্রামে লাগে তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে বলে মন্তব্য করে আইসোলেশন সেন্টার নিয়ে কাজ করা ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ভয়হীনতাই বড় ভয় হয়ে দেখা দিচ্ছে।