গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে এক বৈঠক শেষে বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। একই সাথে আসন্ন এশিয়া কাপে না খেলারও সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যদিও সে সব এখন সবারই জানা। একজন ক্রিকেটার হোক যেকোন ইভেন্ট। বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার বাসনাটা একটা লালিত স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত তামিম সে স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছেন। কেন দিলেন সে বিষয়ে নানা আলোচনা চলছে। যদিও মনে কষ্ট নিয়েই অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন তামিম। তবে ঘোষণাটা দিয়েছেন একেবারে স্বাভাবিক ভাবে। তবে নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে তৃপ্তির কথাই শোনালেন তামিম। তিনি বলেন অধিনায়ক হিসেবে যাত্রাটা দারুণ ছিল। ফলাফলই এর পক্ষে কথা বলবে। আমার মনে হয়, আমি অধিনায়ক হিসেবে খুব ভালো করেছি। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর মাশরাফি বিন মুর্তজার ইনজুরির কারণে প্রথমবার ওয়ানডে অধিনায়কত্ব পান তামিম। পরের বছর মাশরাফি দায়িত্ব ছাড়লে পাকাপাকিভাবে তাকেই নেতৃত্বের ভার দেয় বিসিবি। নিয়মিত ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে মাঠের ক্রিকেটে তার দায়িত্ব শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে।
সব মিলিয়ে ৩৭টি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। এর মধ্যে জয় ২১টি, পরাজয় ১৪টি। ফলাফল হয়নি দুই ম্যাচে। সাফল্যের শতকরা হার ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশকে ৫টির বেশি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে সাফল্যের হারে তিনিই সফলতম। তার অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপ সুপার লিগে তৃতীয় অবস্থানে থেকে সরাসরি মূল পর্বের টিকেট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। তার পরও অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পেছনে তার ইনজুরির কারণে তৈরি অনিশ্চয়তার কথাই বারবার বললেন তামিম। দলের কথা ভেবেই নেতৃত্বকে বিসর্জন দিয়েছেন বলে জানান তামিম। তিনি বলেন আমি বোর্ড সভাপতিকে বলেছি আমি যদি অধিনায়ক হিসেবে থেকে যেতে চাই, তাহলে সেটা স্বার্থপরের মতো কাজ হবে। কারণ আমি সামনের সিরিজটি খেলছিনা। এই অবস্থায় যদি আমি দায়িত্বটা ধরে রাখি, তাহলে এটি স্বার্থপরতা হবে। যারা আমাকে চেনে, আমি সবসময়ই নিজের চেয়ে দলকে এগিয়ে রাখি।
আমি হয়তো নামে অধিনায়ক থাকব না। কিন্তু একাদশে যখনই খেলব, আমি অধিনায়ক হিসেবেই কাজ করব। যে অধিনায়কত্ব করবে তাকে আমার পক্ষ থেকে যতটা সাহায্য করা সম্ভব সবই করার চেষ্টা করব। হয়তো অধিনায়ক হিসেবে নামটা থাকবে না। তবে নিজের সর্বোচ্চটাই দেব নতুন অধিনায়ককে। তামিম দায়িত্ব ছাড়ায় নতুন কাকে অধিনায়ক করা হবে তা এখনই ঠিক করেনি বিসিবি। কিছু দিন সময় নিয়ে জানানো হবে এই সিদ্ধান্ত। তবে নতুন যে দায়িত্ব পাবেন তার ও দলের প্রতি একটাই বার্তা তামিমের। তা হলে সবার লক্ষ্যটা একই। একদিকেই তাকিয়ে আছি আমর। বিশ্বকাপে খুব ভালো করা। আমি অধিনায়ক থাকি বা অন্য কেউ থাকুক, লক্ষ্য একটাই। এটা নতুন করে আর বলার কিছু নেই। ২০২০ সালে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবারই দলকে নিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপে বড় স্বপ্নের কথা বলেছেন তামিম। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এখন বিশ্বকাপের দুই মাস আগে সরে গেলেন দায়িত্ব থেকে। স্বাভাবিকভাবেই সেই কষ্ট আছে তামিমের মনের গভীরে। তাইতো তিনি বলেন যদি বলি আমার খারাপ লাগছে না, তাহলে মিথ্যা বলা হবে। কারণ এতদিন একটা দলের সঙ্গে ছিলাম। তবে আমি মনে করি দল ও দেশ যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে অনেক বড়। আমার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে, এই একটাই কারণ ছিল । আমি নিজের সন্তুষ্টির কথা না ভেবে দল ও দেশের কথা ভেবেছি।