কঠোর লকডাউন শুরু

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন। লকডাউন চলাকালে জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এদিকে সারাদেশের মত চট্টগ্রামেও আজ সকাল থেকে লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে জেলা প্রশাসনের ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। উপজেলাগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। থাকবে বিজিবি, সেনাবাহিনী, আনসার ও পুলিশ সদস্যরা। ভোর থেকে বন্ধ করা হবে নগরীর সব প্রবেশ পথ। চট্টগ্রাম জেলার অধীন সব হাইওয়েতে বসছে চেক পোস্ট। পার্শ্ববর্তী সব জেলা থেকে চট্টগ্রামকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা হবে কঠোর লকডাউনে।
অন্যান্যবার সেনাবাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার না করলেও এবার ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠে গ্রেপ্তার করার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি সিএমপি ও জেলা পুলিশ ভিন্ন ভিন্ন টিমে টহলে থাকবে। বিষয়গুলো সিনিয়র কর্মকর্তারা তদারকি করবেন। কঠোর এই বিধি-নিষেধ আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এই ৭ দিন অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারবে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ আজ থেকে সাতদিন মানুষের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করে ২১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নগরীর সার্কিট হাউজ থেকে একযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা একেকজন একেক এলাকায় গিয়ে অবস্থান করবেন। তাদের সাথে থাকবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
প্রজ্ঞাপন জারি করে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর গতকাল বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সব বাহিনীর সাথে একটি সমন্বয় সভা করে। এতে আগামী সাত দিনের কঠোর বিধি-নিষেধ মানাতে কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা হয়।
জেলা প্রশাসকের স্ট্যাফ অফিসার উমর ফারুক বলেন, অপ্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। যানবাহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জরুরি সেবা সংস্থার গাড়ি শুধু বের হতে পারবে। নগরীতে প্রবেশের পথগুলোতে কঠোর থাকবে প্রশাসন। কঠোর লকডাউন সফল করতেই মূলত আমরা মাঠে থাকবো। আমাদের সাথে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মাঠে থাকবে।
এদিকে সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে এবং আগত মুসল্লীকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। প্রত্যেককে নিজ বাসা থেকে ওযু করে, সুন্নাত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে। কঠোর লকডাউনের মধ্যে সপ্তাহে ৪ দিন (সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার) ব্যাংক খোলা থাকবে। ব্যাকিং সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।
পুলিশ প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরের প্রবেশ পথ বিশেষ করে সিটি গেইট, শাহ আমানত ব্রিজ, কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও অঙিজেন থেকে নগরে ঢুকতে মুখোমুখি হতে হবে চেকপোস্টের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নগরীতে প্রবেশ কিংবা বের হতে পারবে না কেউ। নগরীর পাশাপাশি উপজেলার থানা পুলিশ থাকবে টহলে।
মানতে হবে যে ২১টি বিধি-নিষিধ : ১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। ২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সব প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে। ৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ৪. সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে। ৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। ১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ১৩. জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। ১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেক এওয়ে) করতে পারবে। ১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।
১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে। ১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার‘ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সে সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। ২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবারো জলাবদ্ধতার চিরচেনা ভোগান্তি
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি নেতা আসলাম রিমান্ডে