কখনও দিনে, কখনও রাতে চলছে পাহাড় কাটা

মীরসরাইয়ের করেরহাট

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ২ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসন মাঝে মাঝে তৎপর হলেও পাহাড় খেকোরা তাদের সঙ্গে খেলে চোর পুলিশ খেলা। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের সাইবেনীখিল, লক্ষ্মীছড়া এলাকায় কখনো দিনে, কখনো রাতের আঁধারে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। প্রতি রাতে পিকআপ ভর্তি করে মাটি বিক্রি করছে পাহাড় খেকোরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাইবেনীখিল গ্রামের পিকআপ চালক রিপনের নতুন বাড়ি করা হয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড় কেটে সমতল করে করা হয়েছে বসতি। পাশে পিকআপ চালক রুবেল ও তার ভাই রিয়াদের বসতভিটার সামনেও পাহাড় কাটা রয়েছে। যা তারাই রাতের অন্ধকারে বিক্রি করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানায়। আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, জামাল মেম্বারের বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বের ছড়া ও টিলা থেকে কখনো দিনে কখনো রাতে মাটি কেটে বিক্রি করছে স্থানীয় আলমগীর, মাসুদ ও কালাসহ একটি সিন্ডিকেট। কেউ লক্ষ্মীছড়ায় পানির মেশিন বসিয়ে বালুর টিলার উপর পাইপ দিয়ে পানি দিয়ে বালু নিচে নামিয়ে তা ট্রাক পুরে বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন কয়েক দফা কয়েকটি স্থানে কিছু মেশিন ও পাইপ জব্দ করার পর চোর চক্র নতুন ফন্দি শুরু করে। তারা নিজেরা সোর্স লাগিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কখনো দিনে কখনো রাতে চোর পুলিশ খেলায় নামে।

প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা গেছে, কিছু অসাধু চক্রের সহযোগিতায় করেরহাটের পাহাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে বাড়িঘর তৈরি করে আসছে। সবুজ প্রকৃতি ঘেরা এই এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটার ফলে ধ্বংস হচ্ছে সৌন্দর্য বর্ধক প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড়গুলো। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এলাকার কিছু পাহাড়খেকো তাদের ব্যক্তিস্বার্থে সরকারি খাস মালিকানাধীন পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি করছে, আর কেউ করছে সহযোগিতা। এছাড়া পাহাড় কেটে সেই মাটি বিক্রি করে দেদারসে বেচাকেনাও চলছে।

এদিকে পাহাড় কেটে সৌন্দর্যহানিসহ গোটা এলাকার পরিবেশ নষ্ট করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন কখনো কখনো নামমাত্র অভিযানে নামে। এতে কাজের কাজ কিছু হয় না। এই বিষয়ে বনবিভাগের করেরহাট রেঞ্জ এর দায়িত্বরত সহকারী বন সংরক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, পাহাড় কাটার কোনো অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনসহ আমরা কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করে ১৩টি মেশিন এবং ১৩০০ ফুট পাইপ জব্দ করে তা ধ্বংস করি। আবারও যদি কেউ পাহাড় কাটে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার নদী, খাল বা ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। আর কোনোভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না। এই বিষয়ে আমাদের কোনো প্রকার ছাড় নেই।

জানতে চাইলে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার বলেন, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা খবর পেয়েছি একটি চক্র কখনো দিনে কখনো গভীর রাতে পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশি পণ্যে ২০% সম্পূরক শুল্ক
পরবর্তী নিবন্ধইটের রাস্তায় নেই ইট, মাটির সড়কগুলো যেন চাষের জমি