কক্সবাজার সৈকতে তীব্র ভাঙন, সাগরে বিলীন হাজারো ঝাউগাছ

ঝুঁকির মুখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | সোমবার , ২৮ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। আগ্রাসী ঢেউয়ের লাগাতার আঘাতে বিলীন হয়ে গেছে সৈকতের বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি। এতে উপড়ে গেছে হাজারের অধিক ঝাউগাছ এবং সৈকতের পুলিশ বক্স, লকারসহ ভেঙেছে অনেক স্থাপনা। গত শুক্রবার থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত বৈরি আবহাওয়া বলবৎ থাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিচকর্মী ও লাইফগার্ড সদস্যরা জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার থেকে সাগরের পানি বৃদ্ধি পায়। শুক্রবার থেকে সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ আঘাত হানে তীরে। সমুদ্র সৈকতের লাবণী, শৈবাল, ডায়বেটিক পয়েন্টের বালিয়াড়িতে ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়। সীসেইফ লাইফ গার্ডের দলনেতা মোহাম্মদ ওসমান গণি জানান, ঢেউয়ের তীব্র আঘাতে লাবণী থেকে ডায়বেটিক পয়েন্ট পয়েন্ট পর্যন্ত তীব্র ভাঙন ধরে। তিনদিন ধরে জোয়ারের সময় এই ভাঙন অব্যাহত থাকে।

শৈবাল থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয় পর্যন্ত বালিয়াড়ির ৫১০ গজ পর্যন্ত সাগরে বিলীন হয়েছে। এতে হাজারের অধিক ঝাউগাছ উপড়ে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। একই সাথে লাবণী পয়েন্টে পুলিশ বক্স ও লকার, একটি ওয়াচ টাওয়ার ভেঙে সাগরগর্ভে তলিয়েছে।

এমন ভাঙন অব্যাহত থাকলে সৈকত ঘেঁষে গড়ে তোলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রসহ আরও কিছু স্থাপনা অচিরেই সাগরগর্ভে হারানোর হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বনবিভাগ জানিয়েছে, সাগরের আগ্রাসনে স্মরণকালের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে পড়েছে ঝাউবাগান। গত ১০ বছর ধরে একের পর এক সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ঝাউগাছ। নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সবস্থানে ঝাউগাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারে ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙতে থাকে সৈকতের বালিয়াড়ি। জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউগাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঝাউবাগান। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূল রক্ষায় সাগর তীরে আধুনিক পদ্ধতিতে কোনো বাঁধ নির্মাণ করা যেত তাহলে ঝাউগাছ রক্ষা পেত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ সংকটাপন্ন এই এলাকায় প্রতিবছর জিও ব্যাগ বসিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থায়ী সুরক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সে প্রকল্প পাশ হলে আশা করি এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান মিলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক বছরে বিএনপির আয় ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফ-সেন্টমার্টিনে প্লাবিত দুই শতাধিক বসতি