বালিয়াড়ির ভাঙনে বিলীন হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিপুল ঝাউগাছ। বনবিভাগের হিসাব মতে, এই পর্যন্ত অন্তত ৩ লাখ রোপিত ঝাউগাছ বিলীন হয়েছে সাগরে। দীর্ঘকাল ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও সম্প্রতি কয়েক বছর এই মাত্রা বেড়েছে বহুগুণ। এই পরিস্থিতিকে ভয়ংকর বলে অবহিত করছে বনবিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই প্রেক্ষিতে বালিয়াড়ি রক্ষায় ৬৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পাশাপাশি এই প্রকল্পে পর্যটকদের জন্য নানান সুযোগ–সুবিধাও থাকবে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৭২–৭৩ থেকে ২০২১–২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শিলখালী পর্যন্ত ৪৮৫ হেক্টর জায়গায় ঝাউবন সৃজন করা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ঝাউগাছ রোপণ করা হলেও অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। মেরিন ড্রাইভের ইনানী, হোয়াইক্যং, শিলখালী ও টেকনাফ রেঞ্জের আওতাধীন ঝাউবাগানও বিলীনের পথে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘকাল বালিয়াড়ি ভাঙন হয়ে বিলীন হয়ে আসলেও সম্প্রতি বছরগুলোতে বিলীনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে এই মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্র তীরের বালিয়াডি এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত অংশে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। যেটি অনেকটা অবশিষ্ট ছিল এতদিন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমেই এই ভাঙন হয়ে আসছে।
সর্বশেষ চলতি বর্ষা মৌসুমে লাগাতার লঘুচাপ ও নিম্নচাপের ফলে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ভাঙন দেখা দেয়। এর সাথে বিলীন হয়ে যায় সহস্রাধিক ঝাউগাছ। এর মধ্যে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, শৈবাল, লাবণী, সুগন্ধা এবং কলাতলী পয়েন্ট। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বিস্তৃত সৈকতের এসব পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগের বাঁধ বানিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় এক যুগ ধরে পাউবো ভাঙন ঠেকানোর এই কাজ করে এলেও তেমন একটা সফলতা পায়নি।