চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১২ কিলোমিটার রেলপথে বারবার হাতিরপাল চলে আসায় ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে দিনদিন ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে রেলপথে নির্মাণে লোহাগাড়া–হারবাং সেকশনের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ১২ কিলোমিটার অপরিকল্পিত পাহাড় কাটায় হাতি চলাচলের পথে সৃষ্টি হয় প্রতিবন্ধকতা হয়েছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।
এই রুটের ট্রেন চালক, গার্ড ও টিটিইদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া রেললাইনে রাতের বেলা প্রায় সময় হাতিরপালের দেখা মিলে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ৯টায় হারবাং–লোহাগাড়া সেকশনের চুনতি অভয়ারণ্যে পৌঁছালে ট্রেনের চালক দূর থেকে রেললাইনের ওপর হাতি পাল দেখতে পান। এসময় চালক ঘনঘন হুইসেল দিতে থাকেন এবং ‘ব্রেক’ চাপতে থাকেন। চুনতি ওই এলাকায় চার কিলোমিটার পথে ট্রেনের গতি থাকে ২০ কিলোমিটার। ট্রেন কাছাকাছি আসতেই হাতির পাল রেল লাইন থেকে সরে যায় বলে জানান ট্রেনের চালক, গার্ড এবং টিটিই। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে হাতির পাল চলে আসার ঘটনা বারবার ঘটছে বলে জানান এই রুটের বেশ কয়েকজন ট্রেনচালক, গার্ড এবং যাত্রীরা।
এর আগে গত ২৩ জুলাইও রাত সাড়ে ৯টায় সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে হারবাং–লোহাগাড়া সেকশনের চুনতি অভয়ারণ্যে ট্রেন আসার পর রেললাইনের ওপর একটি হাতি দেখতে পান ট্রেন চালক আবদুল আউয়াল। ধীরগতিতে চালানোর কারণে এবং ট্রেনের হেডলাইটের আলোতে রেলপথের ওপর হাতিকে দেখতে পান। হাতিটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে ‘ব্রেক’ চাপতে থাকেন চালক। হাতিটি যেখানে অবস্থান করছিল, তার ঠিক আগে গিয়ে ট্রেনটি থামে। হাতির কোনো বিপদ না হওয়ায় স্বস্তি পান চালক, গার্ড ও টিটিইসহ সকলেই। এসময় ট্রেনের চালক ঘনঘন হুইসেল দিতে থাকেন। এতে হাতি রেল লাইন থেকে নিচে নেমে যায়।
এদিকে গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথের চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ঈদ স্পেশাল–১০ ট্রেনের ধাক্কায় একটি বন্য হাতি আহত হয়। দুর্ঘটনার দুই দিন পর ১৫ অক্টোবর বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটির মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথের সৈকত এক্সপ্রেস এবং প্রবাল এক্সপ্রেসের চালক এবং গার্ড–টিটিইরা জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে এর আগেও ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মারা গিয়েছিল। এই রুটের একাধিক যাত্রী জানান, বারবার কক্সবাজার রেলপথে হাতির পাল চলে আসায় ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের (হারবাং–লোহাগাড়া) ১২ কিলোমিটার অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটায় হাতি চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। রেলপথ নির্মাণের সময় চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতরে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে হাতি চলাচলের জন্য যে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে তা পরিবেশ সম্মত হয়নি বলে জানান পরিবেশবিদরা। তাদের মতে হাতি চলাচলের আন্ডারপাসের উপর কোনো গাছপালা নেই; আন্ডারপাসটি বন্য হাতির পাল চলাচলের উপযোগী নয়; একটি বাস্তবতার নিরিখে খুবই সরু। তাই অভয়ারণ্যের এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে হাতি চলাচল করে রেললাইন দিয়ে। যার কারণে ট্রেন চলাচলের সময় রেলপথে প্রায় সময় হাতি দেখা যায়।
এই ব্যাপারে কক্সবাজার রেলপথের যাত্রী ও পরিবেশবিদরা জানান, কক্সবাজার রেলপথে যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, হাতির কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজে ১১ দশমিক ৯২ কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেটিই অ্যালাইনমেন্ট। লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নে প্রায় ২০টি পাহাড় কেটে ২ কোটি ২০ লাখ ঘনফুট মাটি সংগ্রহ করেছিল একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য অনুমোদিত পাহাড় কাটার সীমা লক্সঘন করা হয়েছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল।