কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেসের সিংহভাগ টিকিট কালোবাজারিদের হাতে

সিন্ডিকেটে জড়িত অসাধু বুকিং সহকারীরা কাউন্টার ও অনলাইন কোনো পদ্ধতিতেই টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর এই রুটের দুটি ট্রেনের টিকিটই সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে যাত্রীদের কাছে। কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির টিকিট বিক্রির শুরুতেই শেষ হয়ে যায়। যাত্রীদের অভিযোগ সকালে অনলাইনে টিকিট ওপেন হওয়ার সাথে সাথে নক করলেও পাওয়া যাচ্ছে না; সেই সাথে কাউন্টারেও ওপেন হওয়ার সাথে সাথে সশরীরে হাজির হলেও টিকিট মিলছে না। এই দুইটি ট্রেনে চট্টগ্রামের কোটায় ১১৫টি করে টিকিট থাকলেও যাত্রীরা কাউন্টার ও অনলাইন কোনো পদ্ধতিতেই টিকিট পান না। এই দুই ট্রেনের টিকিট নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে শুরু থেকেই অসন্তোষ লেগে আছে। সাংবাদিকরা এবং বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হন যে পর্যটন নগরী কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী দুটো ট্রেনকক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেসের সিংহ ভাগ টিকিটই কালোবাজারিদের হাতে চলে যাচ্ছে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বুকিং সহকারীদের সহায়তায়।

গত বছরের ১১ নভেম্বর কক্সবাজারে স্বপ্নের ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১ ডিসেম্বর থেকে। পরবর্তীতে ১০ জানুয়ারি থেকে চলাচল শুরু হয় পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের। ১৬টি বগি নিয়ে চললে প্রতিটি ট্রেনে ৭৮০জন করে যাত্রী যেতে পারেন। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়। কিন্তু ট্রেন দুটির টিকিট নিয়ে প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় কালোবাজারির খবর প্রকাশ হতে থাকে। কাউন্টারে এবং অনলাইনে গিয়ে যাত্রীরা টিকিট না পেলেও কাউন্টারের বাইরে কালোবাজারিদের কাছে দ্বিগুণ এবং অনেক ক্ষেত্রে আরো বেশি দামে পাওয়া যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা কালোবাজারির কাছ থেকে বাড়তি দামে এই ট্রেনের টিকিট কিনছেন।

অভিযোগ ওঠে, এই দুটি ট্রেনের টিকিটের একটি বড় অংশই কালোবাজারি ও সিন্ডিকেটের দখলে চলে যায়। এই বিষয়টি আমলে নিয়ে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম১ আদালতের বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা গত ১৮ ডিসেম্বর স্বপ্রণোদিত হয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট কালোবাজারি হচ্ছে কি না তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালতে।

এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঢাকাকক্সবাজারের মধ্যে চলাচলকারী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট কালোবাজারি হওয়ার বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, বিচারক র‌্যাব১৫ কে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। ঝিংলজায় অবস্থিত আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কোথায় যাচ্ছে, কোনো সিন্ডিকেটের কবলে কালোবাজারি হচ্ছে কি না, কারা জড়িত এসব তদন্ত করতে বলা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে সম্প্রতি র‌্যাব ট্রেনের টিকিট কারসাজির বিষয়ে তদন্তে নেমে ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বিস্ত্তরিত তুলে ধরেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, অসাধু উপায়ে টিকিট বিক্রি রোধে সরকার কঠোর হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে যাত্রীদের পরিচয়পত্র দিয়ে চক্রটি বিপুল পরিমাণ টিকিট কেটে তা চড়া দামে বিক্রি করে আসছিল।

তাদের কাছ থেকে এক হাজারের বেশি টিকিট জব্দের কথা জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ঢাকাকক্সবাজার রুটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ নামের দুটি ট্রেন চালুর পর টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায়। অনলাইনে বা কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কালোবাজারিদের কাছ থেকে আবার দুইতিন গুণ বেশি দামে এ রুটের টিকেট বিক্রি হতে দেখা যায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকেট সিন্ডিকেটের ‘হোতা’ সেলিম। আর বিমানবন্দর স্টেশনের সিন্ডিকেট প্রধান উত্তম। তাদের নেতৃত্বে সহযোগীরা কাউন্টারে বিভিন্ন যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশেপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদেরকে টাকা দিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়া কাউন্টারে থাকা কতিপয় অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারী দিয়ে যাত্রীদের এনআইডি সংগ্রহ করে। পরে সেগুলো দিয়ে টিকিট কাটা হয়। এভাবে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিলবলে জানান খন্দকার আল মঈন।

সাধারণ যাত্রী সেজে, কখনো ভাড়াটে লোক নিয়ে কিংবা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বছরের পর বছর ধরে একটি চক্র রেলের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

ঢাকা থেকে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেনমো. সেলিম (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), মো. হারুন মিয়া (৬০), মো. মান্নান (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), মো. ফারুক (৬২), মো. শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), মো. জুয়েল (২৩), মো. আব্দুর রহিম (৩২), উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), মো. মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২) ও মো. জোবায়ের (২৫)

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রত্যেক নাগরিকের দ্রুত বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে
পরবর্তী নিবন্ধচিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে তৃণমূল পর্যায় থেকে