বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় পক্ষকাল বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার থেকে আবারও প্রায় পুরোদমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকাজুড়ে। চলতি মাসের শুরুতে কয়েক দিনের হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতে লবণ চাষ বিঘ্নিত হলেও গত কয়েকদিনের অনুকূল আবহাওয়ায় আবারও আশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন লবণ চাষিরা। গত দুইদিনে কক্সবাজারে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে বলে জানায় বিসিক।
এর আগে সর্বশেষ লবণ উৎপাদিত হয়েছিল গত ১ মে। আর ২৮ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে দেশে। সে সাথে দেশের বার্ষিক লবণ উৎপাদন ৬৩ বছরের রেকর্ডও ভেঙেছে। আশা করা হয়েছিল, এ বছর দেশে চাহিদার বেশি লবণ উৎপাদিত হবে। কিন্তু মৌসুমের একেবারে শেষ সময়ে এসে, চলতি মাসের শুরুতে কয়েক দিনের হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতে লবণ চাষ বিঘ্নিত হয়। এ সময় প্রায় এক তৃতীয়াংশ জমিতে লবণ চাষ বন্ধ করে সেই মাঠে জোয়ারের পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করে দেয়া হয়েছে। বাকী এলাকায় এখনও লবণ উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ, রামু ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর বাঁশখালীতে চলতি মৌসুমের প্রথম লবণ উৎপাদন শুরু হয় এবং এরপর ধীরে ধীরে কক্সবাজারের চাষিরাও লবণ উৎপাদনে নামেন। এ বছর লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদন সাড়ে ২৩ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। আগামী ১০ দিন সময় হাতে পাওয়া গেলে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
লবণ চাষিরা বলছেন, লবণ উৎপাদনের মৌসুম ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৬ মাস সময় ধরা হলেও মূলত ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসেই বেশি লবণ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে বৈশাখ মাসের তীব্র গরমে অন্য মাসের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ লবণ উৎপাদন হয়। বিসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে তীব্র তাপদাহের কারণে কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রিসহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও লবণ ক্ষেত্রের জন্য তা আশীর্বাদ হয়ে ওঠেছে।
কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া জানান, গত মৌসুমেও দেশে লবণ উৎপাদন ৬২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিল। গত মৌসুমে (২০২২–২৩) দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, লবণ সেক্টরের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সুনজর থাকায় গত কয়েক মৌসুম ধরে লবণের ভাল দাম পাচ্ছেন চাষিরা। ফলে একদিকে লবণ উৎপাদন জমি বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে একর প্রতি লবণ উৎপাদনের হারও। চলতি মৌসুমে জমির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি চাষির সংখ্যাও ১ হাজার ২২৮ জন বেড়ে হয়েছে ৪০ হাজার ৬৯৫ জনে।
বিসিক সূত্র মতে, ২০২১–২২ মৌসুমে দেশের প্রায় ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণের চাষ হয়। আর গত মৌসুমে (২০২২–২৩) লবণের চাষ হয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে।
২০২২–২৩ মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন এবং উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। অথচ এর আগের মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের টার্গেট ছিল ২৩ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন।