কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কিংবা মেরিন ড্রাইভ থেকে ‘ডাকাত–ইয়াবা ব্যবসায়ী’র গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের খবর প্রায় ২ বছর ধরেই ছিল নিয়মিত। কিন্তু পুলিশের সেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’র গল্প এখন আর শোনা যায় না। শোনা যাচ্ছে না মাদক ব্যবসায়ী অপবাদে কাউকে আটক করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি বা কাউকে ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার কোন অভিযোগও। গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর খুনের পর বন্ধ হয়ে গেছে সেই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ গল্প!। সেইসাথে এই হত্যাকাণ্ডের জের ধরে জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজানোর লক্ষে গত কয়েকদিনে নজিরবিহীন রদবদলের মাধ্যমে জেলায় কর্মরত প্রায় সকল পুলিশ সদস্যকে অন্যত্র বদলি করে দেয়া হয়েছে। জনগণকে সর্বোচ্চ পুলিশি সেবা নিশ্চিত করাই জেলা পুলিশকে এই ঢেলে সাজানোর লক্ষ্য বলে জানান কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান। গতরাতে তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা সততা, নিষ্ঠা ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে ‘পুলিশ–জনতা’ বন্ধু হয়ে কাজ করতে চাই এবং জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে চাই।
এদিকে গতকাল শনিবার জেলার ৮ থানার নতুন ওসিও দায়িত্ব বুঝে নেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসিরা হলেন কক্সবাজার সদরে শেখ মুনিরুল গিয়াস, টেকনাফে মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, রামুতে কেএম আমিরুজ্জামান, মহেশখালীতে মো. আবদুল হাই, উখিয়ায় আহম্মদ মনজুর মোর্শেদ, চকরিয়ায় শাকের মোহাম্মদ জোবায়ের, পেকুয়ায় মোহাম্মদ সাইফুর রহমান মজুমদার ও কুতুবদিয়ায় জালালউদ্দিন। কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান গত বুধবার দায়িত্ব নেন এবং পরদিন বদলিকৃত পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনকে পুলিশ সদস্যরা নজিরবিহীন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ’বরবেশে’ বিদায় জানান। তাকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে রাজশাহী বদলি করা হয়। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার মর্যাদার ৭ কর্মকর্তাকে, ২৩ সেপ্টেম্বর জেলার ৮ থানার ওসিসহ ৩৪ পরিদর্শক এবং এসআই ও এএসআইসহ ২৬৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে। এরপর সর্বশেষ ২৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার পুলিশের ১০৭৫ কনস্টেবলকে একযোগে বদলি করা হয়। বদলিকৃতদের মধ্যে ইতোমধ্যে এসপিসহ ৪২ জন সিনিয়র কর্মকর্তা কক্সবাজারে যোগদান করে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এ বদলি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শৃক্সখলাবাহিনীর সদস্যদের চাকরি বদলির। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সারাদেশেই বদলি হন পুলিশ সদস্যরা। কক্সবাজারে কর্মরতরাও একই প্রক্রিয়ায় বদলির আদেশ পেয়েছেন। যারা চলে যাচ্ছেন তাদের স্থলে অন্যস্থানের দায়িত্বশীলরা বদলি নিয়ে স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। সবমিলিয়ে পরিচ্ছন্ন সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।