কক্সবাজারে ২০০ গ্রাম প্লাবিত ২ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ৩

এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার | শুক্রবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে অন্তত ২০ ইউনিয়নের ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। গতকাল বৃস্পতিবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হয়। প্লাবিত এলাকায় বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। এতে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। ঢলের পানিতে ভেসে রামুতে চৌচিং রাখাইন ও আমজাদ নামের ২ যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে শিশুসহ আরও ৩ জন।

নিখোঁজরা হলেনরামুর ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে শিশু জুনায়েদ ও গর্জনিয়ার রবিউল আলম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান। এছাড়া মহেশখালী যাওয়ার পথে গামবোট থেকে পড়ে বাঁকখালী নদীতে নিখোঁজ ২ যাত্রীর মধ্যে একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো একজনের সন্ধান মেলেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে বাঁকখালী, মাতামুহুরী ও ফুলেশ্বরী নদীতে। ইতিমধ্যে নদীর দুই তীর উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে বানের পানি। ভারি বর্ষণ অব্যাহত কক্সবাজারের ঈদগাঁও, সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। তারমধ্যে চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও ঈদগাঁওয়ের অবস্থা ভয়াবহ।

রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুদেস্তা রীনা জানান, পার্বত্য অববাহিকার বাঁকখালী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি গত বুধবার থেকে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। এতে উমখালীসহ অন্তত ১০ টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে টেকনাফ কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। চকরিয়ার বেড়িবাঁধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জামিল মোরশেদ বলেন, মাতামুহুরী নদীতে বিপৎসীমা অতিক্রম করেই প্রবাহিত হচ্ছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি। এ অবস্থায় হুমকির মুখে রয়েছে কোনাখালীর কাইজ্জারদিয়া, সিকদার পাড়ার বেড়িবাঁধ। একইভাবে খুটাখালী ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধগুলোর যেসব পয়েন্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে সেসব পয়েন্টে লোক নিয়োগ করে জরুরি কাজ করা হচ্ছে। যাতে ভাঙনের কবলে না পড়ে।

পেকুয়া উপজেলার টৈটং মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী, শিলখালী ও সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা এলাকায় অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের জারালবুনিয়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলে অনেক বাড়িঘর, ফসলী জমি এবং জারালবুনিয়া মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ভেঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, কৃষি বিভাগ ব্লক অনুযায়ী সার্বিক চিত্র সংগ্রহ করছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ক্ষতির চিত্র পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলের আমন ধান ও সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ইতিমধ্যে বন্যার পূর্বাভাসের বিষয় জানিয়ে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় বসবাসকারী লোকজন যাতে নিরাপদে সরে যায় সেজন্য মাইকিংও করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৭ কিলোমিটার প্লাবিত, চালকরা আতঙ্কে
পরবর্তী নিবন্ধপানির স্রোতে ভেসে গেল কিশোর, ৮ ঘণ্টা পর মিলল লাশ