কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ঢল

আশানুরূপ সমাগম হয়নি খাগড়াছড়ি রাঙামাটি বান্দরবানে

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৩ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আযহার ছুটিতে দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে এখন ভীড় করছে লাখো পর্যটক। পর্যটকদের ভীড়ে শহরের রাস্তাঘাট, সমুদ্র সৈকত, বিপনীকেন্দ্র ছাড়াও শহরের বাইরে পর্যটনকেন্দ্রগুলোও এখন জমজমাট। অপরদিকে ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রুগুলোয় এবার আশানুরূপ পর্যটক সমাগম হয়নি। বান্দরবানে তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যটকদের বাড়তি চাপ ছিল না। রাঙামাটিতেও অন্যান্যবারের তুলনায় এবার পর্যটক সংখ্যা কিছুটা কম। তবে দেশের প্রথম প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক পর্যটকদর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল । ঈদের দিন গত বৃহস্পতিবার থেকেই টানা চারদিন পর্যন্ত পার্কটিতে অন্তত ২০ হাজার দর্শনার্থীর আগমণ ঘটে। তীব্র গরমের মধ্যেও পরিবার সদস্যদের নিয়ে পার্ক ভ্রমণে আসতে দেখা যায় পর্যটকদর্শনার্থীদের।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেলমোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেলমোটেলগেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে রোববারই সর্বোচ্চ কক্ষ বুকিং হয়েছে। এদিন হোটেলগুলোতে প্রায় ৮০% ভাগ কক্ষ বুকিং ছিল। তবে আগেরদিন শনিবার ছিল মাত্র ৫০% ভাগ। আর ঈদের পরদিন শুক্রবার ছিল ৩০% এর মত। অবশ্য ঈদের আগে মধ্যম মানের হোটেলগুলোতে মাত্র ৫% থেকে ১০% এর বেশি কক্ষ বুকিং হয়নি। তবে তারকা হোটেলগুলোতে ২০% থেকে ২৫% বুকিং ছিল। কক্সবাজারের তারকা হোটেলগুলোতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা আছে।

কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্টস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খানও জানান, রোববারই সর্বোচ্চ ৮০% পর্যন্ত বুকিং হয়েছে কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে। তবে তারকা হোটেলগুলোতেই ৯০%-১০০% পর্যন্ত রুম বুকিং হয়েছে।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা বেশির ভাগ পর্যটক শহরের সমুদ্র সৈকত, বার্মিজ মার্কেট, শুটকীপল্লী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করছেন। অনেকে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দির ছাড়াও স্পীডবোটে সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণে যাচ্ছেন। আর কেউ কেউ কক্সবাজারের পাশ্ববর্তী পার্বত্য বান্দরবান জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটও দেখতে যান।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনে (টোয়াক) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বলেন, এবারের ঈদুল আযহার ছুটিতে কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে কক্ষ বুকিং কম হলেও ঈদের চতুর্থ দিনে ভালই পর্যটক এসেছেন। তবে তা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম, যা গত দুই দশকেও দেখা যায়নি।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, এখানকার আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্টহাউজগুলোতে আশানুরুপ রুম বুকিং না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। পর্যটক না থাকায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে রেস্টুরেন্ট ও ট্যুরিস্ট পরিবহন মালিক শ্রমিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েকদিনের টানা ছুটিতেও আশানুরুপ রুম বুকিং হয়নি আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট গুলোতে। রুম বুকিং ছাড় ঘোষণার পরও পর্যটক না আসায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজি বলেন, পাহাড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিরাপত্তা বিবোচনায় রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি তিনটি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে অনিদিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। সেগুলো ছাড়া অন্যসবগুলো স্পটে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াতে পারছেন।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রুগুলোর এবার আশানুরূপ পর্যটক সমাগম হয়নি। তীব্র গরমের কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গত দুই মাস ধরে পর্যটন সমাগম নেই বললেই চলে। তবে ঈদের বন্ধে পর্যটক সমাগম বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা হয়নি। তাই অনেকটায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। পর্যটন কেন্দ্রগুলো স্থানীয়দের ভিড় দেখা গেছে।

খাগড়াছড়ির আবাসিক হোটেল গাইরিং এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা জানান ,‘ গত ঈদ মৌসুমের তুলনায় এবার পর্যটক সমাগম কমেছে। গতবার হোটেলে কোনো কক্ষই খালি ছিল না। অনেক অতিথিকে কক্ষ ভাড়াও দিতে পারিনি। এবার হোটেলের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। হোটেলের প্রতিটি কক্ষে ২০

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটি শহরের বেসরকারী হোটেলমোটেলগুলোতেও ৫০৬০ ভাগ রুম বুকিং আছে বলে জানিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয়েছে।

সীতাকুণ্ডে পর্যটন স্পটগুলোতে ঈদের ছুটির দিনে পর্যটকের ঢল দেখা গেছে। স্বাভাবিক ছুটির দিনগুলোর তুলনায় গত তিনদিনে ভিড় ছিল দ্বিগুণ থেকে চারগুণ।

সীতাকুণ্ড বাজার কমিটি ও ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম, ইকোপার্ক, গুলিয়াখালী সৈকত, ইকোপার্কের সহস্রধারা ঝরনা ও সুপ্তধারার ঝরনা এলাকায় অন্তত ৩০হাজার পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে এক মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেড়েছে ৫ গুণ
পরবর্তী নিবন্ধঈদের ছুটিতে ফয়’স লেক কনকর্ডে উপচে পড়া ভিড়