কক্সবাজারে রেললাইন : স্বপ্নের বাস্তবায়ন অচিরেই

| রবিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ঘিরে সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘কক্সবাজার ঘিরে আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দীর্ঘতম সৈকতের শহর কক্সবাজারকে সিঙ্গাপুর, ব্যাংককের আদলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ কারণে এখানে সবচেয়ে বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। চলছে এক্সক্লুসিভ জোনসহ ইকোট্যুরিজম ও রেললাইনের কাজ। এসবের পূর্ণতার অন্যতম অনুষঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। স্থলের পাশাপাশি সমুদ্রের জলের ওপর রানওয়েসহ অত্যাধুনিক বিমানবন্দরটি বাস্তবায়ন হলে দিবারাত্রি ফ্লাইটে কক্সবাজার হবে ব্যস্ততম সিটি।’ গত ২৯ আগস্ট কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের রানওয়ে সমপ্রসারণ কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারকে ঘিরে নানা স্বপ্ন দেখতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই স্বপ্নে রয়েছে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে তৈরি করার পরিকল্পনাও। তার প্রচেষ্টায় ঝাউবন স্থাপন হয়েছে। তার রেখে যাওয়া পরিকল্পনারই অংশ কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সমপ্রসারণ।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারের প্রতি জাতির পিতার আলাদা আকর্ষণ ছিল। তিনি তো জেলখানায় থাকতেন বেশিরভাগ সময়। কিন্তু যখন তিনি জেলের বাইরে থাকতেন, তখন প্রতিবছর শীতকালে আমাদের নিয়ে একবার কক্সবাজার বেড়াতে যেতেন। তখনকার কক্সবাজারের অবস্থা এ রকম ছিল না। তখন ছোট ছোট কটেজ ছিল, কাঠের ঘর ছিল। সেই কটেজ ভাড়া করে থাকতে হতো। এমনকি আমরা তার সঙ্গে উখিয়াতে গেছি। তখন ঘন জঙ্গল ছিল উখিয়াতে। উখিয়াতে জঙ্গলের পথ বেয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। আমরা সেখানে ডাকবাংলোতে ছিলাম। রাতের বেলায় বাঘের গর্জন, পাখির ডাক, হাতির ডাক সবই শোনা যেত। সেখানে হাতি আসতো, বাঘের ডাক শোনা যেত, এতো ঘন জঙ্গল সেখানে ছিল যদিও এখন তার চিহ্ন মাত্র নেই।
কক্সবাজার হবে আধুনিক পর্যটন শহর, এ কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এরইমধ্যে গড়ে উঠেছে দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এটিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত সমপ্রসারণের কাজ চলছে। রেললাইনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে গেছে কক্সবাজার। এসব পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে শহরটি। যেমনটা জাতির পিতা চেয়েছেন।’
গত ১৯ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার নির্মাণাধীন রেলপথে ৯টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে অধিকাংশেরই কাজ শেষের পথে। শুধুমাত্র লোহাগাড়া স্টেশন বিল্ডিংয়ের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। অন্য আট স্টেশনের বিল্ডিংয়ের ছাদের কাজও শেষ হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে। এরই মাধ্যমে রেলে চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্ন আরো কাছে চলে আসছে। এদিকে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মূল কাজও ৬৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েলগেজ রেল লাইন প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে (১শ’ কিলোমিটারের মধ্যে) মোট ৯টি স্টেশন বিল্ডিং থাকছে। স্টেশন বিল্ডিংগুলো হলো- দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ (ঈদগাঁও), রামু ও কক্সবাজার।
খবরে আরো বলা হয়, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পে চারটি বড়, ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট, ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। রেললাইনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন রেললাইনে অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইভারের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থা সংযোজন এবং কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে সর্বাধুনিক আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনাঞ্চলের ভেতরে হাতি চলাচলের জন্য দুটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সবগুলোর সেতুর স্প্যান ও পিলারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কক্সবাজার অংশের ২০টি সেতুতে গার্ডার বসানো প্রায় শেষের পথে। দোহাজারী অংশের ১৮টি সেতুর স্প্যান ও পিলার নির্মাণ শেষে ১২ এপ্রিল থেকে গার্ডার বসানো শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার ঘিরে সরকার যেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে কক্সবাজার অচিরেই স্বপ্নের শহরে পরিণত হবে। রেললাইনের কাজ শেষ হলেই স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রথম ধাপ অতিক্রম করা যাবে। আশা করি, অল্পদিনের মধ্যে মানুষ তার সফলতা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে