দুর্গাপূজার বন্ধসহ টানা চারদিনের সরকারি ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের স্রোত এখন দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারের দিকে। গতকাল বৃহস্পতিবার টানা সরকারি ছুটির প্রথমদিনে কক্সবাজার শহরের হোটেল মোটেলে ৯০% ভাগের বেশি কক্ষ বুকিং হয়েছে। আর আজ শুক্রবার থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত শতভাগ কক্ষ বুকিং হবে বলে আশা করছেন হোটেল মালিকরা। গতকাল সকাল ও দুপুরে কক্সবাজার শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটক সপরিবারে দল বেঁধে অথবা বন্ধুবান্ধব মিলে ঘোরাঘুরি করছেন। কেউবা নেমেছেন সাগরের নোনা পানিতে গোসল করতে।
কক্সবাজার শহর সংলগ্ন সৈকত ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ শহরের বাইরের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও ছিল হাজার হাজার মানুষের ভিড়। পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, গত ৪ মাসের মধ্যে এ সপ্তাহেই সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক আসবেন কক্সবাজারে। হোটেল মালিকরা জানান, গত জুলাই মাসে আন্দোলনের কারণে ২ মাস ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে মন্দাকাল চলে। এরপর গত মাসের শেষার্ধ থেকে ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়তে থাকে।
সাগরপাড়ের তারকাহোটেল কক্সটুডে’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, বৃহস্পতিবার তাদের হোটেলে প্রায় ৯০% ভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। আর শুক্রবার থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত শতভাগ কক্ষ বুকিং হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একই আশা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেল–মোটেল–গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, আইন শৃক্সখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছর কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের ঢল নামবে।
এদিকে দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজার ঢাকা–রুটে ৭টি বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে। ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চারদিন এই বিশেষ ট্রেনগুলো চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রথম বিশেষ ট্রেনটি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। আর ১১ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রেনগুলো ছেড়ে যাবে। কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এই রুটে নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেনের পাশাপাশি এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বিশেষ ট্রেনের আসন সংখ্যা থাকবে ৫১৮টি, আর কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী ট্রেনের আসন সংখ্যা থাকবে ৬৩৪টি। পর্যটকদের জন্য এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিসটি দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজারে ভ্রমণের আনন্দকে আরও নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
এ রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। এরমধ্যে কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে যাত্রার সময় আসন সংখ্যা ৭৯৭ এবং ফিরতি পথে আসন ৭৩৭টি। পর্যটক এক্সপ্রেস এর ধারণ ক্ষমতা ৭৮০ জন।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত: শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে পিক সিজন এবং বর্ষাকালীন সময়কে অফসিজন বা মন্দা মৌসুম হিসাবে ধরা হয়। এরপরও বর্ষাকালে সরকারী ছুটির দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার এবং অফিস খোলার দিনে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। তবে প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেল–মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। এসব হোটেলে প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।