কক্সবাজারে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটির কাছে সংঘটিত সংঘর্ষে শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুর নাগাদ কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিমান ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতি পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ ও হতাতের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দীন।
নিহত নাহিদ স্থানীয় বাসিন্দা ও কক্সবাজার পিটিআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট মো. নাছির উদ্দীন এবং কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমেনা বেগম দম্পতির একমাত্র পুত্র। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার ১৭ মাস বয়সের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। আহতদের মধ্যে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ছাবের আহমদের পুত্র শিক্ষানবিশ আইনজীবী জাহেদ হোসেন ও শাহাদাত হোসেনের অবস্থা গুরুতর। এলাকাবাসী বিকালে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাবোক্তগীন মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে। আঘাতে তার মাথার পেছনের অংশ উড়ে গেছে। গুলিতে নাকি ইট–পাটকেলের আঘাতে মাথায় জখম হয়েছে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ১ নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ার উচ্ছেদ আতংকে ভোগা একদল লোক সকালে আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসার কথা। আমি বাসায় ছিলাম। পরে শুনি বিমানবাহিনীর সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে। আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই এবং আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাথে নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনগণকে শান্ত করি। তিনি বলেন, এই ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত।
জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। উত্তেজনা প্রশমনে দুই পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছে প্রশাসন। ঘটনা সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে যা বলছে আইএসপিআর : বিডিনিউজ জানায়, সমিতিপাড়ায় কী ঘটেছে, সে বিষয়ে বিমানবাহিনীর ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, কক্সবাজারে অবস্থিত বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার (২৪–২–২০২৫) তারিখে বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমানবাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতি পাড়ার দুই শতাধিক মানুষ বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমানবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমানবাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমানবাহিনীর সদস্যদের উপর ইট–পাটকেল ছোড়ে। এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইট–পাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে বিমানবাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমানবাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমানবাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমানবাহিনীর Rules of Engagement অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের উপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমানবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় জনগণের ইট–পাটকেলের আঘাতে বিমানবাহিনীর গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। এছাড়া স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যা পরবর্তীতে বেশি সমপ্রসারিত হয়নি।
আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত ঘটনা প্রকাশে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, যা সত্য নয়।
২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারি প্রজ্ঞাপনে ওই ঘাঁটির নাম পরিবর্তন করে ‘বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার’ রাখা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে বলে আইএসপিআরের ভাষ্য। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও বিমানবাহিনী দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সর্বদা অঙ্গীকারাবদ্ধ।