কক্সবাজারে নেমেছে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু তবুও গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে ভারী বর্ষণ হয়েছে। বইছিল দমকা হাওয়া। সেই সাথে বজ্রপাতে জনমনে আতংক বিরাজ করে।
কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, কয়রা, খুলনায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসাবে বর্তমানে যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশঃ বৃষ্টিপাত ঝড়িয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ মি. মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়েছে শহরের নিম্নাঞ্চল। বার্মিজ মার্কেট থেকে বাজারঘাটা পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাড়া–মহল্লার সড়ক–উপসড়কগুলোও পানির নিচে রয়েছে। এতে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, তাও অতিপ্রয়োজনে। সোমবার থমকে ছিল অফিস–আদালতের কার্যক্রম।
শহরের গোলদিঘির, বৌদ মন্দির সড়ক, বড় বাজার, টেকপাড়া, কালুর দোকান, তারাবনিয়ারছড়া, নুর পাড়া, সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, ফদনার ডেইল, কুতুবদিয়া পাড়া ও হোটেল মোটেল জোনের বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। অনেকের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। শহরের গোলদিঘির পাড় এলাকার বলরাম দাশ অনুপম জানান, ঘুম থেকে ওঠে দেখি রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে ঘরবন্দী হয়ে আছি। নাস্তা বা বাজার করার জন্যও বের হতে পারেনি দিনভর। বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, এখানে অনেক দোকানে পানি ঢুকেছে। এতে অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সবাই ব্যস্ত ছিল মালামাল সরাতে।
বৃহত্তর টেকপাড়া জনকল্যাণ সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম কেলু বলেন, এখানে নতুন করে রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণ হচ্ছে। তাই অনেক সড়ক বন্ধ। পানি চলাচল করতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
কঙবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কঙবাজারে ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। তারমধ্যে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯৭৮৭ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। আশ্রিতদের মাঝে রান্না করা খাবারসহ শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পরিবেশন করা হয়েছে। ৯১টি মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৬৩ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলায় ১৫৩টি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত তুলে নেয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীরা স্ব স্ব গৃহে ফিরে গেছে।