জাল–জালিয়াতির একটি মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা থেকে ডিসির নাম বাদ দিতে এ জাল–জালিয়াতির ঘটনা ঘটে।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমানের আদালতে জালিয়াতির এ মামলায় চার্জগঠন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। আগামী ১ জুলাই চার্জগঠনের জন্য নতুন দিন ধার্য হয়েছে। দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভু আজাদীকে বলেন, আসামি পক্ষ সময়ের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন এবং আগামী ১ জুলাই চার্জগঠনের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন। কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম ছাড়া জালিয়াতির এ মামলার বাকি তিন আসামি হলেন, কঙবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ। আদালতসূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী দুর্নীতির অভিযোগে কঙবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় দুদককে। কিন্তু তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো কাগজপত্র থেকে ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দেন। বিষয়টি জানাজানির পর এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে অপর মামলাটি দায়ের করেন। সেই মামলার তদন্ত শেষে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক রিয়াজউদ্দিন গত বছরের ১ জুলাই পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব নথিপত্র আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। পরদিন সকালে আদালতের কর্মচারী সৈয়দ আকবর নথিপত্র কঙবাজার ডাকঘরে জমা দেওয়ার জন্য রওনা দিলে তাঁকে আবার আদালতে ফিরিয়ে এনে খামটি স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজের কাছে পাঠানো হয়। পরে জাল–জালিয়াতি করে উক্ত আবেদন থেকে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে ২৮ জন আসামির নাম থাকলেও পরে ৩টি পৃষ্ঠা পাল্টে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমের নাম বসানো হয় এবং বাদীর স্বাক্ষর জাল করে ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জনকে আসামি দেখিয়ে দুদকে নথি পাঠানো হয়। এই জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়।