কক্সবাজারে ধর্ষণের ঘটনায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন অনুযায়ী সরকারের কিছুই করার নেই। আইনমন্ত্রী তার নথিতে বলেছেন, আইনে বিদেশ পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। কাজেই আমরা এটা কিছু করতে পারছি না। গতকাল বুধবার নগরীর চান্দগাঁওয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ পালন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের ঘটনায় মামলা রেকর্ড হয়েছে, এটি তদন্তাধীন বিষয়। তদন্তাধীন কোনো মামলায় আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারি না। গতকাল চান্দগাঁও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চত্বরে চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, মোহরা, পূর্ব ষোলশহর, পশ্চিম ষোলশহর ও আমিন শিল্পাঞ্চল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এই চট্টগ্রাম বীরের চট্টগ্রাম। এটা সূর্যসেনের-প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের চট্টগ্রাম। কখনো আন্দোলনে, কখনো ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে চট্টগ্রামের মানুষ সব সময় এগিয়ে আসেন। এম এ হান্নানের মতো বীর সন্তানের জন্ম এই চট্টগ্রামে। ২৬ তারিখ চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি এম এ হান্নানের কণ্ঠে শুনেই সকলে দেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমরা প্রথমেই তাঁর ঘোষণাটি শুনেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে হান্নান ভাইয়ের সেই ঘোষণাটি এই স্থানে এসে বার বার মনে পড়ছে। ঢাকার পিল খানার ঘোষণাটি অনেকে শুনলেও অনেকে শুনেন নাই। তিনি আরো বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস প্রকাশ হলো, কালুরঘাট নয় চান্দগাঁও বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা হয় সেটিই আজকে প্রকাশ হলো। মন্ত্রী বলেন,
বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু মানেই আমাদের পতাকা। আমি আবারো ফিরে আসি চট্টগ্রামের ঘটনায়। আমরা যখন ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের অপারেশন সার্চ লাইটে। সেদিন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে রক্ত দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তখন ইপিআরের সদস্যরা পাল্টা আঘাত হেনেছিল পাকিস্তানিদের উপর। সেই রাতে আমরা দেখলাম দেশে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা বাংলাদেশের মানুষ তৈরি হয়েছিলো। সেদিনের ঘোষণা আমরা কান পেতে শুনেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে যখন অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তারের আগেই ইপিআরের এক সুবেদারের কাছে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ইপিআরের ৪ সদস্য মিলে তখন রাত ১২টা ১ মিনিটেই বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা দিতে শুরু করল। তখন আর্মিরা দিশেহারা হয়ে গেল। কোথা থেকে এটা ঘোষণা আসছে। তখন তারা খুঁজে খুঁজে তাদের বের করে আর বেঁচে থাকতে দেয়নি। চট্টগ্রামে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে মোশাররফ ভাই এখনো বেঁচে আছেন। তারা একত্রিত হয়ে মনে করলেন একজন আর্মি অফিসারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনাটি পাঠ করানো গেলে দেশের মানুষ আরো উদ্ধুদ্ধ হবেন। ২৭ তারিখ বোধয় দুপুর ১২টা/১টার দিকে আমি মেজর জিয়ার বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি শুনেছিলাম। এই গুলো সত্যিকারের ঘটনা। কিন্তু এখন এগুলোকে বিকৃত করে কত ধরনের ঘটনা তৈরি করছে। কত ধরনের অপচেষ্টা করে সত্যকে বিকৃত করা হয়েছে। এখন জিয়াউর রহমান যদি ফিরে আসতেন তিনি নিজেই লজ্জিত হতেন। সত্যটা বলতেন। জিয়াউর রহমান জীবিত থাকাস্থায় কখনো তিনি এ বিষয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। তার মৃত্যুর পর আমরা অনেক কিছুই শুনেছি। আমরা অনেক কিছু দেখলাম। আমরা অনেক কিছু সহ্য করেছি।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাঝে মাঝে বলেন আমি নীলকণ্ঠ। আমি বিষ খেতে খেতে এই পর্যন্ত-তারপরেও আমি চলেছি। সব কিছু হারিয়েও আজ আমি চলছি। যথার্থই তিনি বলেন। আজকে সেই ১৫ আগস্টে যখন আসে সেই নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের কথা ভেবে বাংলাদেশের দেশের মানুষ শিউরে উঠে। ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শিশু রাসেলকেও বাদ দেয়নি। এই নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একজন আবিষ্কার করলেন তার জন্মদিন নাকি ১৫ আগস্ট। আমাদের ভাবতেও কষ্ট লাগে। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কিভাবে হতে পারে এসব। আসলে তার জন্মদিন ছিলো ৫ই সেপ্টেম্বর। যেটা আমরা পত্রপত্রিকাসহ সব জায়গায় দেখেছি।
মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির সভাপতিত্বে এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, মহানগর আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, চান্দগাঁও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের স্থাপনা সংরক্ষণ, স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল ও জাদুঘর নির্মাণ এ দাবি চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে আমিও একমত। তিনি বলেন, শ্রীঘ্রই কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু হবে। উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের শেখ হাসিনা সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি সত্যিই আমাদের জন্য গৌরবের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, সে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফলতার আলো স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেখতে পেয়েছে এবং আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধারা জীবদ্দশায় দেখতে পেয়েছি সেটাই আমাদের জন্য গৌরবের।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু অংশগ্রহণ করে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকাবস্থায় প্রাণ ভয়ে, লোভ ও ক্ষমতার মোহে নতি স্বীকার করেন নাই। তার সুযোগ্য কন্যাও আজ মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে সফল ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
আরও বক্তব্য রাখেন, মহানগর আওয়ামী লীগ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর জুবাইদা নার্গিস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিলু নাগ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ শিক্ষা সম্পাদক বোরহান উদ্দিন এমরান, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা প্রমুখ।